কোম্পানি নিবন্ধন <strong>কোম্পানি নিবন্ধন: পাবলিক</strong><strong>, প্রাইভেট ও একক কোম্পানি</strong>

কোম্পানি নিবন্ধন: পাবলিক, প্রাইভেট ও একক কোম্পানি

কোম্পানি নিবন্ধন – দেশি ও বিদেশি কোম্পানি খোলার নিয়মাবলী

কোম্পানি কী?

কোম্পানি হলো আইনসৃষ্ট কৃত্রিম ব্যক্তিসত্তার অধিকারী এমন একটি ব্যবসায় সংগঠন যা আইনের অধীনে গঠিত ও পরিচালিত, যেখানে শেয়ার ক্রয়ের মাধ্যমে এর মালিকগণ অর্থ বিনিয়োগ করে।

যৌথ মূলধনী ব্যবসায় এক প্রকার স্বেচ্ছামূলক সংগঠন যেখানে বহু ব্যক্তি মিলিত হয়ে ব্যবসায় পরিচালনার উদ্দেশ্যে একটি যৌথ তহবিল গঠন করে। এ ব্যক্তিগণ ব্যবসায় থেকে উদ্ভুত মুনাফা ভোগ করা বা লোকসানের ক্ষতি বহন করার জন্য দায়বদ্ধ থাকে। অন্যভাবে বলা যায়, মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে কতিপয় ব্যক্তি স্বেচ্ছায় মিলিত হয়ে যৌথভাবে মূলধন বিনিয়োগ করে যে ব্যবসায় সংগঠন গড়ে তোলে তাকে কোম্পানি সংগঠন বা যৌথমূলধনী কোম্পানি বলে। সীমাবদ্ধ দায়ের ভিত্তিতে গঠিত এ সংগঠন কৃত্রিম ব্যক্তিসত্তার অধিকারী, এর নিজস্ব সিলমোহর থাকে এবং এটি দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী পরিচালিত হয়ে থাকে।

কোম্পানি নিবন্ধন Company registration

কোম্পানি নিবন্ধন সম্পর্কে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংজ্ঞা নিম্নে দেওয়া হলো: 

“কোম্পানি বলতে এ আইনের অধীনে গঠিত এবং নিবন্ধিত কোম্পানি বা বিদ্যমান কোম্পানিকে বোঝায়।” – ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইন, ধারা ২(১) 

“কোম্পানি হলো আইনের চোখে অস্তিত্বময় একটি অদৃশ্যমান কৃত্রিম ব্যক্তিসত্তা।” – বিচারপতি জন মার্শাল 

উল্লিখিত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, কোম্পানি সংগঠন হচ্ছে সীমাবদ্ধ দায়ের ভিত্তিতে গঠিত চিরন্তন অস্তিত্বের অধিকারী আইনসৃষ্ট কৃত্রিম ব্যক্তিসত্তাবিশিষ্ট ব্যবসায় সংগঠন যা কতিপয় ব্যক্তির যৌথমূলধন নিয়ে পরিচালিত হয়।

কোম্পানি সংগঠনের বৈশিষ্ট্য 

১. আইন সৃষ্ট প্রতিষ্ঠান: যৌথ মূলধনী কোম্পানী একটি আইনসৃষ্ট ব্যবসায় সংগঠন। দেশের প্রচলিত কোম্পানি আইনের আওতায় এব্যবসায় গঠিত হয়। আইনি প্রক্রিয়ার অধীনে হয় বলে এর গঠন বেশ জটিল ও আনুষ্ঠানিকতাপূর্ণ্। আইন আনুযায়ী এর সদস্য সংখ্যা নির্ধারিত হয়। প্রাইভেট লিমিটেড ক্ম্পোনির ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ২জন এবং সর্বোচ্চ ৫০জন এবং পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন সদস্য ৭জন এবং সর্বোচ্চ সংখ্যা শেয়ার সংখ্যা দ্বারা সীমাবদ্ধ।

২. কৃত্রিম ব্যক্তিসত্তা: আইনের দ্বারা সৃষ্ট বলে এ ব্যবসায়টি কৃত্রিম সত্তার অধিকারী। কৃত্রিম ব্যক্তি সত্তা বলতে বোঝায়। ব্যক্তি না হয়েও ব্যক্তির ন্যায় আইনগত মর্যাদা ও অধিকার অর্জন করা। কোম্পানী যে কোনো স্বাধীন ব্যক্তির মতো নিজ নামে অন্যের সাথে চুক্তি ও লেনদেন করতে পারে এবং প্রয়োজনে মামলা করতে পারে। আবার অন্য কোন পক্ষও কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে।

৩. চিরন্তন অস্তিত্ব: কোম্পানি ব্যবসায় যেহেতু আইনের মাধ্যমে সৃষ্ট তাই এর বিলুপ্তি ঘটাতে চাইলে তা করতে হবে আইনের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায়। এভাবে সে চিরন্তন অস্তিত্বের মর্যাদা লাভ করে। কোনো শেয়ার হোল্ডারের মৃত্যু, দেউলিয়াত্ব বা শেয়ার হস্তান্তরের মাধ্যমে কোম্পানির বিলোপ সাধন হয় না।

৪. সীমিত দায়: কোম্পানি ব্যবসায়ের সদস্যগণের দায় সীমিত। একমালিকানা বা অংশীদারি ব্যবসায়ের মতো অসীম নয়। সদস্যগণের দায় সাধারনত শেয়ার মূ্ল্য ও প্রতিশ্রুতি দ্বারা সীমাবদ্ধ। শেয়ার মূল্য দ্বারা সীমাবদ্ধ বলতে বোঝায় একজন শেয়ার মালিক যে মূল্যমানের শেয়ার কেনে তিনি শুধু সে পরিমাণ অর্থের জন্য দায়ী। অর্থাৎ যদি কোনো শেয়ার মালিক কোনো কোম্পানির ১০০টাকা মূল্যের ১০০টি শেয়ার ক্রয় করেন তাহলে তার দায় শুধু ১০,০০০টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। অন্যদিকে প্রতিশ্রুতি দ্বারা সীমাবদ্ধ কোম্পানিতে একজন শেয়ারমালিক যে পরিমাণ শেয়ার ক্রয়ের জন্য প্রতিশ্রুতি দেন সে পরিমাণ অর্থের জন্য দায়বদ্ধ থাকবেন।

৫. শেয়ারের হস্তান্তরযোগ্যতা, শেয়ার মূলধন ও  মূলধনের পর্যাপ্ততা: আইনগতভাবেই কোম্পানির মূলধনকে কতকগুলো সমান অঙ্কের ক্ষুদ্র এককে ভাগ করা হয়। এরুপ প্রত্যেকটি একককে একটি করে শেয়ার বলে। শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে কোম্পানি মূলধন সংগ্রহ করে। এজন্য এগুলোকে শেয়ার মূলধন বলে। ১৮ বছরের উর্ধ্বে যে কোনো ব্যক্তি এবং যে কোনো প্রতিষ্ঠান শেয়ার কিনে এর সদস্যপদ লাভ করতে পারে। সদস্য সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে এবং শেয়ার বিক্রি করে মূলধন সংগ্রহ করার সুযোগ থাকার কারণে কোম্পানি ব্যবসায়ে অধিক মূলধনের সমাবেশ ঘটে।

৬. সিলমোহর ব্যবহার: কৃত্রিম ব্যক্তি হওয়ার কারণে কোম্পানিকে একটি সিল ব্যবহার করতে হয়। কোম্পানির সকল কাজে ও কাগজপত্রে এ সিলের ব্যবহার বাধ্যতামূলক।

৭. স্বতন্ত্র ব্যবস্থাপনা: কোম্পানি ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে কোম্পানির মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণ আলাদা। একমালিকানা বা অংশীদারি ব্যবসায়ের মতো মালিকেরা সরাসরি ব্যবস্থাপনায় অংশগ্রহণ করে না। ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব থাকে বেতনভুক্ত অন্য একটি পক্ষের উপর। পরিচালক বা মালিকগণ নীতি নির্ধারণ কাজে অংশগ্রহণ করে থাকেন।

কোম্পানি অ্যাক্ট, ১৯৯৪

সারা বিশ্বে সর্বপ্রথম কোম্পানি আইন চালু হয় ১৮৪৪ সালে। ভারতে কোম্পানি আইন পাস করা হয় ১৯১৩ সালে। বাংলাদেশ বর্তমানে প্রচলিত আইন ১৯৯৪ সালে। বাংলাদেশে কোম্পানির সংজ্ঞা দেওয়া হয় ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনের ২-(১-ঘ) ধারা অনুযায়ী।  

১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনে মোট অনুচ্ছেদ বা খণ্ড আছে – ১১টি। ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনে মোট তফসিল আছে – ১২টি। ১৯৯৪ সালে কোম্পানি আইনে মোট ধারা আছে – ৪০৪টি।

শ্রেণিবিভাগ
কোম্পানি নিবন্ধন <strong>কোম্পানি নিবন্ধন: পাবলিক</strong><strong>, প্রাইভেট ও একক কোম্পানি</strong>

একক ব্যক্তি কোম্পানি

উন্নত দেশগুলোতে থাকলেও দেশে এত দিন এক ব্যক্তির কোম্পানি করার সুযোগ ছিল না। কোম্পানি আইন সংশোধন করে সুযোগটি দিয়েছে সরকার। ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইন সংশোধন করে গত ২৬ নভেম্বর ২০২০ সালে ‘কোম্পানি (দ্বিতীয় সংশোধন) আইন, ২০২০’–এর গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে।

  • এক ব্যক্তির কোম্পানি বা ওপিসির পরিশোধিত মূলধন হবে ২৫ লাখ থেকে ৫ কোটি টাকা। 
  • কোম্পানির ধরন অনুযায়ী নামের শেষে লিমিটেড, পিএলসি ও ওপিসি উল্লেখ করতে হবে।

এক ব্যক্তির কোম্পানি হল সেই কোম্পানি, যার বোর্ডে সদস্য থাকবেন কেবল একজন। সংশোধিত কোম্পানি আইন, ১৯৯৪ এর ধারা ২ এর ১(খ) মতে, এক ব্যক্তি কোম্পানি বলতে এমন একটি কোম্পানিকে বুঝাবে যার শেয়ার হোল্ডার শুধুমাত্র একজন প্রাকৃতিক সত্ত্বাবিশিষ্ট ব্যক্তি বা Natural Person। একমাত্র পরিচালক মারা গেলে সব শেয়ারের মালিক হবেন তার মনোনীত ব্যক্তি। পরিচালক ও প্রধান ব্যক্তি একজন থাকেন বলে এ ধরনের কোম্পানির পর্ষদ সভা করা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় নিয়মের ছাড় পাবে।

বিলে বলা হয়েছে, এক ব্যক্তি কোম্পানির পরিশোধিত শেয়ার মূলধন হবে অন্যূন ২৫ লাখ টাকা এবং অনধিক ৫ কোটি টাকা। পরিশোধিত শেয়ার মূলধন এবং বার্ষিক টার্নওভারেএর বেশি হলে শর্তপূরণ সাপেক্ষে এক ব্যক্তির কোম্পানিকে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি বা ক্ষেত্রমত পারলিক লিমিটেড কোম্পানিকে রূপান্তর করা যাবে।

ধারা ১১ক(গ) অনুসারে এইরূপ সীমিতদায় এক ব্যক্তি কোম্পানির ক্ষেত্রে কোম্পানির নামের শেষে “এক ব্যক্তি কোম্পানি বা One Person Company বা OPC” শব্দসমূহ লিখতে হবে। কিন্তু শর্ত থাকে যে, ধারা ২৮ এর অধীন মুনাফা ব্যতীত ভিন্ন উদ্দেশ্য বিশিষ্ট সমিতি এবং ধারা ২৯ এর অধীন গ্যারান্টি দ্বারা সীমিতদায় কোম্পানির ক্ষেত্রে কোম্পানির নামের শেষে ”এক ব্যক্তি কোম্পানি বা One Person Company বা OPC” শব্দসমূহ লিখতে হবে না।

যার ফলে এখন থেকে আর শুধু আইন রক্ষার্থে বা নিয়ম রক্ষার্থে কাউকে কোম্পানির শেয়ার হোল্ডার বানানোর প্রয়োজন নেই। আপনি চাইলে নিজে নিজেই এক ব্যক্তি বিশিষ্ট কোম্পানি নিবন্ধন করে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন। এবার আসুন আমরা আলোচনা করি এক ব্যক্তি বিশিষ্ট কোম্পানি নিবন্ধন করতে গেলে আপনার কী কী প্রয়োজন (প্রয়োজনের তালিকাটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির মতোই):

  • জাতীয় পরিচয়পত্র/ভোটার আইডি কার্ড
  • পাসপোর্ট সাইজের ছবি
  • মোবাইল নাম্বার
  • ই-মেইল অ্যাড্রেস
  • টিন (TIN) সার্টিফিকেট  
  • সিগনেচার

এক ব্যক্তি বিশিষ্ট কোম্পানি নিবন্ধন এ আপনার যে যে যোগ্যতার প্রয়োজন ঠিক তেমনি নমিনিরও একই ধরনের যোগ্যতা প্রয়োজন। কেননা আপনার অবর্তমানে তাঁকে কোম্পানি পরিচালনার দায়িত্ব নিতে হবে সেক্ষেত্রে নমিনিরও জাতীয় পরিচয়পত্র, ছবি, মোবাইল নাম্বার, ইমেইল, টিন, সিগনেচার ইত্যাদি সংযুক্ত করতে হবে। তবে আপনি চাইলে আপনার নমিনি যেকোনো মুহূর্তে পরিবর্তন করতে পারবেন, যেমনটা ব্যাংকের নমিনি পরিবর্তন করা যায়। আবার একইভাবে নমিনি নিজেও আপনার সাথে কথাবার্তা বলার মাধ্যমে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিতে পারেন।

এক ব্যক্তি বিশিষ্ট কোম্পানি নিবন্ধন করার সময় আপনার কোন প্রকারের ট্রেড লাইসেন্সের প্রয়োজন হবে না বরং আপনার কোম্পানি নিবন্ধন হয়ে যাওয়ার পরে কোম্পানির নামে ট্রেড লাইসেন্স করতে পারবেন। এই ক্ষেত্রে আপনি একটি কোম্পানি দিয়েই অনেকগুলো কাজ করতে পারবেন। অনেকের ধারণা থাকে যে আমাকে ভিন্ন ভিন্ন কাজের জন্য ভিন্ন ভিন্ন কোম্পানি করতে হবে কিনা। 

আপনি একটি এক ব্যক্তি বিশিষ্ট কোম্পানির মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন। পাশাপাশি একজন এক ব্যক্তি বিশিষ্ট কোম্পানির মালিক থাকা অবস্থায় আপনি চাইলে অন্যান্য প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি বা পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার হতে পারবেন, তাতে কোনো বাঁধা নেই। কিন্তু একজন ব্যক্তির শুধুমাত্র একটি এক ব্যক্তি বিশিষ্ট কোম্পানির মালিকানা থাকতে পারবে, কেউ একসাথে একাধিক এক ব্যক্তি বিশিষ্ট কোম্পানির মালিক হতে পারবেন না।

কোম্পানি নিবন্ধন <strong>কোম্পানি নিবন্ধন: পাবলিক</strong><strong>, প্রাইভেট ও একক কোম্পানি</strong>
প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি

প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি একটি পৃথক আইনিসত্তা এবং এর শেয়ারহোল্ডারদের সীমিত দায়বদ্ধতা রয়েছে। উপরন্তু, কোম্পানির শেয়ার সাধারণ জনগণের কাছে কখনোই দেওয়া হবে না। 

সীমিত দায়বদ্ধতার শব্দটি দ্বারা বোঝায় যে শেয়ারহোল্ডারদের দায় শুধুমাত্র প্রাথমিকভাবে বিনিয়োগ করা পরিমাণে সীমিত। মূল বিনিয়োগে শেয়ারের নামমাত্র মূল্য এবং শেয়ার ইস্যু করার সময় প্রদেয় প্রিমিয়াম অন্তর্ভুক্ত। শেয়ারহোল্ডার এবং পরিচালকদের ব্যক্তিগত সম্পদ সব নিরাপদ এবং কোম্পানির ঋণ বন্ধ পরিশোধ করার জন্য নেওয়া যাবে না। বেসরকারী লিমিটেড কোম্পানির কর্মচারী, মালিকানা বা কোম্পানীর সামগ্রিক কর্মসংস্থানের মধ্যে কোনও পরিবর্তন ছাড়াই বাজারে কাজ চলতে থাকে। 

কোম্পানীর সব আইনি বিষয়গুলির জন্য তার নাম ব্যবহার করবে না এবং কোনও ক্ষেত্রে পরিচালক বা মালিকের নাম নয়। এটি এমন সংস্থা যা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং কিছু আইনি চুক্তিতে প্রবেশ করে। প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিতে ন্যূনতম শেয়ারহোল্ডার থাকতে হয় দুই জন। আর সর্বোচ্চ শেয়ারহোল্ডার হতে পারে ৫০ জন। এর বেশি শেয়ারহোল্ডার নিতে হলে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরিত করতে হয়।

প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির কোনো শেয়ারহোল্ডার শেয়ার বিক্রি করতে চাইলে তাকে বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যই তা বিক্রি করতে হয়। তবে তাদের সম্মতি সাপেক্ষে বাইরের কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে শেয়ার বিক্রি বা হস্তান্তর করা যায়। কোম্পানি জনসাধারণের কাছে শেয়ার এবং ডিবেঞ্চার ও বন্ডসহ কোনো ধরনের ঋণপত্র বিক্রি করতে পারে না।

কোম্পানি নিবন্ধন <strong>কোম্পানি নিবন্ধন: পাবলিক</strong><strong>, প্রাইভেট ও একক কোম্পানি</strong>

পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি

একধরনের সসীম দায়বদ্ধ কোম্পানি যারা জনগনের কাছে শেয়ার ছাড়তে পারে। যুক্তরাজ্য ও কমনওয়েলথভুক্ত দেশে এই ধরনের প্রতিষ্ঠান পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি বা পিএলসি নামে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এটি পাবলিক কোম্পানি নামে পরিচিত। পৃথিবীব্যাপী জনপ্রিয় কোম্পানি সংগঠন হলো পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি (Public Limited Company/PLC)। এসকল কোম্পানী বাজারে শেয়ার ছাড়ার মাধ্যমে মূলধন জোগাড় করে থাকে। কোম্পানির শেয়ার হোল্ডার তাদের পছন্দমাফিক যে কারো কাছে শেয়ার বিক্রি করতে পারেন। 

কোম্পানি আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে জনসাধারণের কাছে শেয়ার ও বন্ড বিক্রি করতে পারে। বাংলাদেশে এধরনের কোম্পানির সদস্য সংখ্যা সর্বনিম্ন ৭ জন এবং সর্বোচ্চ শেয়ার দ্বারা সীমাবদ্ধ থাকে, শেয়ার অবাধে হস্তান্তরযোগ্য এবং কোম্পানি শেয়ার ও ঋণপত্র জনগণের উদ্দেশ্যে ক্রয়-বিক্রয়ের আহবান জানায়।

মালিকানার ভিত্তিতে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিকে দুইভাগে এবং নিয়ন্ত্রণের ভিত্তিতে আরো দুভাগে ভাগ করা যায়:

সরকারি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি: কোনো কোম্পানির মালিকানা বা এর শেয়ার মালিকানার কমপক্ষে ৫১% শেয়ার যদি সরকারি মালিকানায় থাকে এবং এর পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব সরকারের হাতে থাকে, তবে তাকে সরকারি মালিকানায় পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি বলে।

বেসরকারি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি: কোনো কোম্পানির শেয়ারের কিয়দংশ সরকার গ্রহণ করলে তাকে আধা-সরকারি কোম্পানি বলে। কোনো কোনো সময় সরকার শেয়ার মূলধনের শতকরা ৩০% বা ৪০% গ্রহণ করে। এতে সরকারি ও বেসরকারি মালিকানার সংমিশ্রণ ঘটে বলে একে আধা-সরকারি কোম্পানি বলে

প্রাইভেট লিমিটেড ও পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির মধ্যে পার্থক্য

প্রাইভেট লিমিটেড ও পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির মধ্যে মিলের চেয়ে অমিলই বেশি। এ দুই ধরনের কোম্পানির মধ্যে মাত্র একটি বিষয়ে মিল রয়েছে-সেটি হচ্ছে এ ধরনের কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার যে পরিমাণ শেয়ার ধারণ করেন কোম্পানির দায়-দায়িত্ব তার উপর ততটুকুই বর্তায়। কোম্পানি লভ্যাংশ বিতরণ করলে শেয়ারহোল্ডার তার ধারণকৃত শেয়ার সংখ্যার অনুপাতে লভ্যাংশ পান। আবার লোকসান বা ঋণ থাকলে তার দায়িত্বও আনুপাতিক হারে বহন করতে হয়। পুরো দায় কোনো শেয়ারহোল্ডারকে নিতে হয় না। 

কয়েকটি বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে প্রাইভেট ও পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে: 

০১. শেয়ারহোল্ডার সংখ্যা: প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিতে ন্যূনতম শেয়ারহোল্ডার থাকতে হয় দুই জন। আর সর্বোচ্চ শেয়ারহোল্ডার হতে পারে ৫০ জন। এর বেশি শেয়ারহোল্ডার নিতে হলে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরিত করতে হয়। অন্যদিকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে ন্যুনতম ৭ জন শেয়ারহোল্ডার থাকতে হয়। কিন্তু শেয়ারহোল্ডারের সর্বোচ্চ কোনো সংখ্যা থাকে না। অর্থাৎ যথাযথ প্রক্রয়া অনুসরণ করে, ক্ষেত্র বিশেষে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন নিয়ে যে কোনো সংখ্যক শেয়ার ইস্যু করা যায়। 

০২. শেয়ার হস্তান্তর: প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির শেয়ার হস্তান্তর ও ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ থাকে, যা পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্র থাকে না। প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির কোনো শেয়ারহোল্ডার শেয়ার বিক্রি করতে চাইলে তাকে বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যই তা বিক্রি করতে হয়। তবে তাদের সম্মতি সাপেক্ষে বাইরের কোনো ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে শেয়ার বিক্রি বা জস্তান্তর করা যায়। অন্যদিকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির শেয়ারহোল্ডাররা তাদের পছন্দমাফিক যে কারো কাছে নিজ নিজ শেয়ার বিক্রি করতে পারেন। 

০৩. সাধারণের কাছে শেয়ার বা বন্ড বিক্রি:  প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্র এ সুযোগ নেই। অর্থাৎ প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি জনসাধারণের কাছে শেয়ার এবং ডিবেঞ্চার ও বন্ডসহ কোনো ধরণের ঋণপত্র বিকি্র করতে পারে না। পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি আইনী প্রক্রিয়া অনুসরণ করে জনসাধারণের কাছে শেয়ার ও বন্ড বিক্রি করতে পারে।

পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি বা যৌথমূলধনী কোম্পানির অর্থায়নের উৎসসমূহ

১. শেয়ার বিক্রয়

২. ঋণপত্র বিক্রয়

৩. লভ্যাংশ সঞ্চিতি

৪. বিনিয়োগকারী সংস্থার নিকট হতে ধার

৫. ব্যাংক ওভারড্রাফট

৬. আন্তর্জাতিক সংস্থা হতে অর্থ সংগ্রহ

৭. ব্যবস্থাপনা প্রতিনিধির মাধ্যমে মূলধন সংগ্রহ

গঠনপ্রণালী:

কোম্পানির গঠনপ্রণালী মূলত কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয়। যথা:

 

১. উদ্যোগ গ্রহণ: ধাপ ১: আইনানুগ সর্বনিম্ন সংখ্যক ব্যক্তি পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন:

 

১. নাম নির্বাচন ও অনুমোদন গ্রহণ

২. কোম্পানির প্রকৃতি নির্ধারণ

৩. উদ্যোক্তার সংখ্যা

৪. কোম্পানি গঠন সংক্রান্ত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন

 

২. নিবন্ধন পর্যায়: ধাপ ২: কোম্পানীর প্রবর্তকগণ নিম্নোক্ত দলিল সংগ্রহ করেন বা প্রস্তুত করেন। প্রবর্তকগণ এ পর্যায়ে দলিলপত্রাদি সংযোজনের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশনের নির্ধারিত ফি প্রদানপূর্বক রেজিস্ট্রেশন অফিস থেকে রেজিস্ট্রেশন ফরম পূরণ করেন ও প্রয়োজনীয় অন্যান্য দলিলাদি সংযোজন করেন। দলিলগুলো হলো:

 

১. স্মারক লিপি (Memorandum of Association): স্মারকলিপি বা সংঘস্মারক বা পরিমেলবন্ধ স্মারকলিপি হলো কোম্পানীর মূল দলিল। এর দ্বারাই কোম্পানীর কার্যক্ষেত্র ও ক্ষমতার সীমা নির্ধারিত হয়।

২. পরিমেল নিয়মাবলি (Articles of Association): পরিমেল নিয়মাবলী বা সংঘবিধি এই দলিলে অন্তর্ভুক্ত থাকে কোম্পানির অভ্যন্তরীণ কার্যকলাপ পরিচালনা সংক্রান্ত যাবতীয় নিয়ম-কানুন। এতে পরিচালকদের কর্তব্য, অধিকার ও ক্ষমতা, ব্যবসায় পরিচালনার পদ্ধতি ও প্রকৃতি ইত্যাদিরও উল্লেখ থাকে।

৩. পরিচালকদের নামের তালিকা (Directors Schedule)

৪. পরিচালকদের সম্মতিসূচক পত্র (Letter of Agreement)

৫. ঘোষণাপত্র (Letter of Declaration)

৬. নিবন্ধনপত্র সংগ্রহ (Collection of Certificate of incorporation)

 

৩. কার্যারম্ভ পর্যায়: ধাপ ৩: শুধুমাত্র পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে এপর্যায়ে কাজ আরম্ভ করার অনুমতি পত্র সংগ্রহ করতে হয়। এজন্য প্রবর্তকগণ আরও কিছু দলিল নিবন্ধকের নিকট জমা দেন এবং কোম্পানীর বিবরণপত্র প্রস্তত করেন। নিবন্ধকের সন্তুষ্টিতে কার্যারম্ভের অনুমতিপত্র সংগৃহীত হয় এবং কোম্পানি কাজ আরম্ভ করে।

১. বিবরণী পত্র

২. কোম্পানির পরিচালকদের নাম, ঠিকানা, পদবি, পেশা, ইত্যাদির পূর্ণ বিবরণ

৩. পরিচালক হিসেবে কাজ করতে ইচ্ছুক, এ মর্মে প্রত্যেক পরিচালকের লিখিত ও স্বাক্ষরযুক্ত ঘোষণাপত্র

৪. পরিচালকগণ ন্যূনতম যোগ্যতাসূচক শেয়ারের মূল্য পরিশোধ করেছে, এ মর্মে ঘোষণা পত্র

৫. ব্যবসা আরম্ভ করার জন্য আইনানুগ সবকিছু পালন করা হয়েছে, এই মর্মে সচিব বা পরিচালকগণ কর্তৃক ঘোষণা পত্র

প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন

উদ্যোক্তাগণ নতুন প্রতিষ্ঠানের নামের ছাড়পত্র (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) নিয়ে নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র ও ফি সহ নির্ধারিত আবেদন ফর্মের মাধ্যমে আবেদন করবেন। উদ্যোক্তাগণকে যা করতে হবে-

 

১. আরজেএসসি’র নির্ধারিত ফরমেটে প্রতিষ্ঠানের যথাযথ মোমোরেন্ডাম/আর্টিকেল অব এসোসিয়েশন তৈরী,

২. আরজেএসসি’র ওয়েব সাইটে গিয়ে অনলাইনে নিবন্ধনের জন্য আবেদন,

৩. নিবন্ধনের জন্য নির্ধারিত ফি, নির্ধারিত ব্যাংক এ জমা দেয়া।

 

আরজেএসসি এই শর্তে নিবন্ধন পত্র প্রদান করে যে উদ্যোক্তাগণ-

 

১. নিবন্ধনের আগে নামের ছাড়পত্র পেয়েছে্ন,

২. ছাড়পত্র আবেদনের মেয়াদের মধ্যে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছেন,

৩. নির্ধারিত ফরমেটে কোম্পানির মোমোরেন্ডাম/আর্টিকেল অব এসোসিয়েশন আবেদনের সাথে জমা দিয়েছেন,

৪. প্রয়োজনীয় নিবন্ধন ফি জমা দিয়েছেন।

 

নিবন্ধনের জন্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রঃ

 

প্রাইভেট কোম্পানি (কোম্পানি আইন, ১৯৯৪ অনুযায়ী)

১. মেমোরেন্ডাম অব এসোসিয়েশন ও আর্টিকেল অব এসোসিয়েশন, মূলকপি ও অতিরিক্ত দুই কপি

২. ফরম I পূরণঃ কোম্পানি নিবন্ধনের ঘোষণা [অনুচ্ছেদ-২৫]

৩. ফরম VI পূরণ- নিবন্ধিত অফিসের অবস্থান বা তার পরিবর্তনের নোটিশ [অনুচ্ছেদ-৭৭]

৪. ফরম IX পূরণ- পরিচালকের সম্মতিপত্র [অনুচ্ছেদ-৯২]

৫. ফরম X পূরণ- পরিচালক হতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের তালিকা [অনুচ্ছেদ ৯২]

৬. ফরম XII পূরণ- পরিচালক, ব্যবস্থাপক এবং ব্যবস্থাপনা এজেন্টদের তথ্য এবং তাতে কোন পরিবর্তন [অনুচ্ছেদ ১১৫]

৭. নামের ছাড়পত্র

 

পাবলিক কোম্পানি (কোম্পানি আইন, ১৯৯৪ অনুযায়ী)

১. মেমোরেন্ডাম অব এসোসিয়েশন ও আর্টিকেল অব এসোসিয়েশন, মূলকপি ও অতিরিক্ত দুই কপি

২. ফরম I পূরণঃ কোম্পানি নিবন্ধনের ঘোষণা [অনুচ্ছেদ-২৫]

৩. ফরম VI পূরণ- নিবন্ধিত অফিসের অবস্থান বা তার পরিবর্তনের নোটিশ [অনুচ্ছেদ-৭৭]

৪. ফরম IX পূরণ- পরিচালকের সম্মতিপত্র [অনুচ্ছেদ-৯২]

৫. ফরম X পূরণ- পরিচালক হতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের তালিকা [অনুচ্ছেদ ৯২]

৬. ফরম XII পূরণ- পরিচালক, ব্যবস্থাপক এবং ব্যবস্থাপনা এজেন্টদের তথ্য এবং তাতে কোন পরিবর্তন [অনুচ্ছেদ ১১৫]

৭. ফরম XIV পূরণ-বিবরণীর পরিবর্তে কোম্পানি ফাইলিং স্ট্যাট্মেন্ট এর ক্ষেত্রে ব্যবসা শুরুর পূর্বে ঘোষণাপত্র [অনুচ্ছেদ ১৫০]

৮. ফরম XI পূরণ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)- প্রস্তাবিত কোম্পানির যোগ্যতা শেয়ার গ্রহণের চুক্তিপত্র [অনুচ্ছেদ ৯২]

৯. নামের ছাড়পত্র

 

বিদেশি কোম্পানি (কোম্পানি আইন, ১৯৯৪ অনুযায়ী)

১. ফরম XXXVI পূরণ- সনদ বা সংঘবিধি বা মেমোরেন্ডাম এবং কোম্পানির আর্টিকেল অথবা কোম্পানির সংবিধান গঠনকারী বা সংজ্ঞায়নকারী কোনো দলিল,

২. ফরম XXXVII  পূরণ- কোম্পানির নিবন্ধিত বা প্রধান অফিসের ঠিকানা,

৩. ফরম XXXVIII পূরণ – পরিচালক এবং ব্যবস্থাপকদের (ম্যানাজার) এর তালিকা [অনুচ্ছেদ ৩৭৯],

৪. ফরম XXXIV পূরণ- সেবা গ্রহণ করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির রিটার্ন,

৫. ফরম XLII পূরণ- বাংলাদেশে কার্যক্রমের প্রধান স্থানের অবস্থান বা তাতে কোন পরিবর্তন,

৬. কোন তফসিলি ব্যাংক থেকে মুদ্রা নগদীকরণ (ইনক্যাশমেন্ট) সার্টিফিকেট,

৭. বাংলাদেশের বিনিয়োগ বোর্ডের কাছ থেকে অনুমতিপত্র।

 

ট্রেড অরগানাইজেশন (কোম্পানি আইন, ১৯৯৪ অনুযায়ী)

১. মেমোরেন্ডাম এবং আর্টিকেল অব এসোসিয়েশন, মূল কপি ও অতিরিক্ত দুই কপি,

২. ফরম I পূরণ- কোম্পানি নিবন্ধনের ঘোষণা,

৩. ফরম VI পূরণ- নিবন্ধিত অফিসের অবস্থান বা তাতে কোনো পরিবর্তনের তথ্য [অনুচ্ছেদ ৭৭],

৪. ফরম IX পূরণ- পরিচালকের কর্ম সম্মতিপত্র [অনুচ্ছেদ ৯২],

৫. ফরম X পূরণ- পরিচালক হতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের তালিকা [অনুচ্ছেদ ৯২],

৬. ফরম XII পূরণ- পরিচালক, ব্যবস্থাপক এবং ব্যবস্থাপনা এজেন্টদের তথ্য এবং তাতে কোন পরিবর্তন [অনুচ্ছেদ ১১৫],

৭. সরকারি লাইসেন্স (বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ট্রেড লাইসেন্স),

৮. নামের ছাড়পত্র।

 

সোসাইটি (সোসাইটি নিবন্ধন আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী)

১. মেমোরেন্ডাম অব এসোসিয়েশন,

২. নামের ছাড়পত্র।

 

পার্টনারশীপ ফার্ম (পার্টনারশীপ আইন, ১৯৩২ অনুযায়ী)

১. ফরম I পূরণ- ফার্মের নিবন্ধন সংক্রান্ত বিবৃতি (স্ট্যাটমেন্ট),

২. অংশীদারিত্বের চুক্তিপত্র।

 

কোম্পানির পদসমূহ

একটি কোম্পানির ২ টি পদ বাধ্যতামূলক:

১. চেয়ারম্যান (Chairman)

২. ব্যবস্থাপনা পরিচালক (Managing Director/MD)

সদস্য সংখ্যা বেশি থাকলে আরো অনেক পদ রাখা যায়:

১. Vice Chairman (সহ সভাপতি)

২. Chief Executive Officer (প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা)

৩. Deputy Managing Director (উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক)

৪. Executive Director (নির্বাহী পরিচালক)

৫. Finance Director (অর্থ পরিচালক)

৬. Marketing Director (বিপণন পরিচালক), এছাড়াও আরো অনেক পদ রয়েছে।

কোম্পানি প্রোফাইল

কেউ আপনার সাথে শেয়ারে ব্যবসা করতে চায়, তিনি আপনার ব্যবসার আইডিয়া, প্রসেস বিস্তারিত সম্পর্কে জানতে চায়। তার জন্য আপনার একটা কোম্পানি প্রোফাইল তৈরী করা দরকার।আপনি কোন ব্যক্তি বা সংস্থার সাথে ব্যবসা করতে চাইলে তারা কোম্পানি সম্পর্কে জানতে চাইলে আপনার প্রোফাইলটি সাবমিট করতে হতে পারে। কোন সংস্থায় পন্য সরবরাহ করার জন্য তালিকাভুক্তির প্রয়োজন হতে পারে। তখন তারা আপনার কাছে কোম্পানি প্রোফাইল চাইবে। কোন এসোসিয়েশন এর সদ্যস্য হওয়ার জন্য আপনার কোম্পানি প্রোফাইল প্রয়োজন হতে পারে।ব্যাংক বা কোন আর্থিক সংস্থা থেকে লোন নেয়ার জন্য আপনার কোম্পানি প্রোফাইল লাগবে।

কোম্পানি প্রোফাইলে যা যা থাকবে:

০১. নাম, ঠিকানা, ব্যবসার ধরণ, লোগো

০২. মালিকের নাম, ঠিকানা, ছবি, স্বাক্ষর

০৩. ফোন, ই মেইল, ওয়েব

০৪. লিগাল ডকুমেন্টস: ট্রেড, টিন, ভ্যাট, কোম্পানী নিবন্ধনের এসবের সকল তথ্য ও অনুলিপি

০৫. ব্যবসার উদ্দেশ্য, বয়স, সফলতা

০৬. কর্মী সংখ্যা, তাদের বেতন, যোগ্যতা যোগদানের তারিখ, দায়িত্ব

০৭. ব্যাংকস ডিটেইল

০৮. ব্যবসার নীতি পলিসি: ইতিবাচক দিক, টার্গেট গ্রুপ, বর্তমান পরিস্থিতি

০৯. আকৃষ্ট করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য যুক্তি ও ছবি

১০. অফিসের ছবি, বিভিন্ন কাজের ছবি

১১. লিগাল ডকুমেন্টস সমূহের কপি

১২. কোন পুরষ্কার পেলে তার বিবরণ

১৩. সেবা বা পন্য সমূহের ফিচার

১৪. সাকসেস কেস হিস্ট্রি

১৫. গ্রাহক সন্তুষ্টির গল্প

১৬. কোন কোন সংস্থার সদস্যপদ আছে তার বিবরণ

১৭. বড়ো বড়ো কাজগুলোর সংক্ষিপ্ত বর্ননা

১৮. নামকরা কোন কোম্পানীর সাথে ব্যবসা করলে সে তথ্য প্রমাণ

১৯. মার্কেটিং পলিসি

২০. বিজ্ঞাপন সমূহের নমুনা

২১. বাজার ব্যবস্থার বিশ্লেষন ও যুক্তি

২২. উদ্যোক্তার নিজস্ব বক্তব্য

২৩. বিদেশি বা বিশেষ কেউ কমেন্ট করলে অথবা পত্রিকায় কোন খবর বের হলে তার কাটিং

২৪. অফিসিয়াল ডায়গ্রাম

২৫. আর্থিক পলিসি: বিনিয়োগ লাভ লোকসান আয় ব্যয় ইত্যাদি

২৬. সামাজিক উদ্যোগের বিবরণ

২৭. ভ্যাট ট্যাক্স প্রদানের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার স্টেটমেন্ট

২৮. ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

২৯. ম্যানেজমেন্ট কৌশল, কর্মী ব্যবস্থাপনা, টোটাল প্রসেস

৩০. মান, সেবা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে ধারণা, ইত্যাদি।

কোম্পানি নিবন্ধন Company registration

বাংলাদেশে নতুন কোম্পানি খোলার আদ্যোপান্ত

কোম্পানি করার প্রথম ধাপ হচ্ছে নাম নির্বাচন। যে নাম নির্বাচন করলেন, আগে যাচাই করতে হবে যে সেই নামের কোনো কোম্পানি ইতিমধ্যে আছে কি না। যে নামে কোম্পানিটি করতে চাচ্ছেন, সেই নামে কোনো কোম্পানি নিবন্ধিত হয়ে থাকলে আপনাকে নতুন নাম খুঁজতে হবে। একই নামে একাধিক কোম্পানির নাম নিবন্ধন হতে না দেওয়াই এর উদ্দেশ্য।

এখনই দুই লাখের মতো কোম্পানি আছে দেশে। নতুন কোম্পানির নাম নিবন্ধন করতে প্রথমেই যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের কার্যালয়ের (আরজেএসসি) ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখতে হবে পছন্দের নামটি দিয়ে কোম্পানি করা যাবে কি না। নামটি যদি একেবারেই নতুন হয় এবং আরজেএসসি কোনো আইনি সমস্যা না পায়, তবে তারা নামের ছাড়পত্র (নেম ক্লিয়ারেন্স) দিয়ে দেবে। ছাড়পত্র না পেলে নতুন নাম দিয়ে আবার আবেদন করতে হবে।  

www. roc. gov. bd-এই ওয়েবসাইটে নিজের নামে একটি অ্যাকাউন্ট করে নামের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করা যায়। আবেদন করার পর একটি ব্যাংক পেমেন্ট স্লিপ দেওয়া হয় এবং নির্ধারিত ব্যাংকে ৬০০ টাকার সঙ্গে ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক) জমা দিতে হয়। টাকা পরিশোধ করার পর আবার ওয়েবসাইটে গিয়ে অ্যাকাউন্ট লগ-ইন করতে হয়। তখন একটি ছাড়পত্রের সনদ পাওয়া যায়। নামটি ছয় মাস পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকে। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে সময় বৃদ্ধির অনুরোধ করলে আরজেএসসি বাড়িয়ে দেয়।   

কোম্পানি নিবন্ধন করতে আরজেএসসির ওয়েবসাইটে প্রয়োজনীয় তথ্য জমা দিতে হয়। কোম্পানির জন্য তৈরি করতে হয় সংঘ স্মারক ও সংঘ বিধি। কোম্পানির উদ্দেশ্য ও কার্যাবলি সম্পর্কে বর্ণনা থাকে এগুলোতে। ব্যবসার নাম, ব্যবসার ধরন, অনুমোদিত ও পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণও উল্লেখ থাকে।  কীভাবে কোম্পানি পরিচালক পর্ষদ নির্বাচিত হবে, কোম্পানির সাধারণ সভা এবং বিশেষ সভা কীভাবে কখন হবে, তারও উল্লেখ থাকবে এতে। কীভাবে নতুন সদস্য নেওয়া হবে, কীভাবে কোনো সদস্যকে বহিষ্কার করা হবে, কীভাবে লভ্যাংশ বণ্টন করা হবে ইত্যাদি বিষয়ও থাকবে। 

সবকিছু প্রস্তুত করেই আরজেএসসির ওয়েবসাইট থেকে কোম্পানির নিবন্ধনের আবেদনপত্র ডাউনলোড করতে হবে এবং ওই আবেদনপত্র যথাযথভাবে পূরণ করতে হবে। সঙ্গে সংঘ স্মারক ও সংঘ বিধির মূল কপি ও অতিরিক্ত দুই কপি, নামের ছাড়পত্রের সনদ, পরিচালকদের তালিকা, পরিচালকের সম্মতিপত্র দিতে হবে। আরেজএসসিতে এগুলো জমা দেওয়ার পর যাচাই-বাছাই হবে। 

এরপর কোম্পানির নিবন্ধনের জন্য সুনির্দিষ্ট ফি ধার্য করে দেবে। কোম্পানির অনুমোদিত মূলধনের ওপর ভিত্তি করে সুনির্দিষ্ট ফি ধার্য হয়ে থাকে সাধারণত। ব্যাংকে ফি জমা করার পর কাজ শেষ হয়েছে বলে ধরে নেওয়া যায়। আরজেএসসির কর্মকর্তারা নথি পরীক্ষা করে সন্তুষ্ট হলে ডিজিটালভাবে স্বাক্ষর করবেন। এরপর সার্টিফিকেট অব ইনকরপোরেশন, সংঘ স্মারক ও সংঘ বিধি এবং ফরম ১২ ই-মেইলে পাঠিয়ে দেবে আরজেএসসি। এগুলো পেয়ে যাওয়া মানেই কোম্পানিটি নিবন্ধিত হয়েছে।

বিদেশে নতুন রপ্তানিকারক হতে করণীয়

নতুন কেউ রপ্তানিকারক হতে চাইলে তাকে প্রথমেই আমদানি ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের দপ্তরে নাম নিবন্ধন করতে হবে। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী ‘রপ্তানি রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কোনো ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান রপ্তানি করতে পারে না। সেজন্য নতুন রপ্তানিকারককে নিকটস্থ আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের অফিসে গিয়ে রপ্তানি রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট নিতে হয়।  

নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে ফরম পূরণ করে রেজিস্ট্রেশন করা যায়। এজন্য ট্রেড লাইসেন্সের ফটোকপি, স্বীকৃত চেম্বার/অ্যাসোসিয়েশন থেকে বৈধ মেম্বারশিপের সার্টিফিকেট, ফি জমাদানের প্রমাণ হিসেবে  ট্রেজারি চালানের মূল কপি, অংশীদার প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে রেজিস্টার্ড অংশীদারি দলিলের সত্যায়িত কপি, লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে সার্টিফিকেট অব ইনকর্পোরেশন, মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন, আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশনের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হয়। 

রপ্তানি নিবন্ধন সনদপত্র বা এক্সপোর্ট রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট (ইআরসি) পাওয়ার পর নিকটস্থ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো থেকে বিদেশি ক্রেতাদের তালিকা, নির্দিষ্ট পণ্যের জন্য বিদেশের নির্দিষ্ট বাজারের সন্ধান ও ফলাফল জানা যাবে। বিদেশে যেসব পণ্য রপ্তানি করবেন সেসব পণ্যের প্রতিযোগিতামূলক মূল্য, বিদেশে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় অংশগ্রহণের সুযোগও মিলবে। রপ্তানি নীতিতে প্রদত্ত বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার নানা দিকের কথাও এখান থেকে জানা যাবে।  

রপ্তানি-বাণিজ্যের উন্নয়নের জন্য সরকার রপ্তানিকারকদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে। রপ্তানি থেকে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার একটি অংশ রপ্তানিকারক তাদের রিটেনশন কোটায় বৈদেশিক মুদ্রা অ্যাকাউন্টে জমা রাখতে পারেন। যার পরিমাণ সময়ে সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারণ করে থাকে। জমাকৃত টাকা থেকে রপ্তানিকারক প্রকৃত ব্যবসায়িক ব্যয়নির্বাহ করতে পারবেন।   

এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরোতে (ইপিবি) একটি রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল রয়েছে। এ তহবিল থেকে রপ্তানিকারকদের পণ্য উৎপাদনের জন্য হ্রাসকৃত সুদে ও সহজ শর্তে ভেঞ্চার-ক্যাপিটাল (উদ্যোক্তা-বান্ধব অর্থায়ন) প্রদান করা হয়। পণ্যের উন্নয়ন ও বহুমুখিকরণের ক্ষেত্রে বিদেশি কারিগরি পরামর্শ, সেবা ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়া হয়। বিদেশে বিপণন মিশন প্রেরণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় অংশগ্রহণে সহায়তা করা হয়।  

রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল থেকে প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। তৈরি পোশাক ছাড়াও অন্যান্য রপ্তানিপণ্যের ক্ষেত্রে ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্র খোলার সুবিধা দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। ক্যাপিটাল মেশিনারিজ ও কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে হ্রাসকৃত সুদ ও সহজ শর্তে ঋণ দেয়া হয়।

এছাড়া রপ্তানির অর্থ সংস্থান, রপ্তানি-ঋণ, রপ্তানিশিল্পের ক্ষেত্রে বন্ড সুবিধা, রপ্তানিমুখি শিল্পের জন্য সাধারণ সুযোগসুবিধা, আকাশপথে শাক-সব্জিসহ প্ল্যান্ট, ফলমূল, ফুল ও বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে হ্রাসকৃত হারে বিমানভাড়ার সুবিধা ও সর্বোপরি রপ্তানিকারকদের জন্য আমদানি নীতি আদেশ ২০১২-২০১৫ তে প্রদেয় সুযোগ সুবিধা, রপ্তানি বাণিজ্যে বর্জনীয় বিষয়সমূহ, রপ্তানিনিষিদ্ধ পণ্যের তালিকা (২০১৫-২০১৮) কোন কোন্ পণ্য রপ্তানি করা যাবে, সে তালিকা পেতে যোগাযোগ করতে পারেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর বাণিজ্য তথ্যকেন্দ্রে (টিআইসি)।

আরও বিস্তারিত জানতে অথবা কোম্পানি সংক্রান্ত কোনও সেবা নিতে আমাদের হটলাইন নাম্বারে ফোনকল/ইনবক্স করুন কিংবা হোয়াট্যস্ অ্যাপে যোগাযোগ করুন।