খতিয়ান খতিয়ান, রেকর্ড এবং পর্চা

খতিয়ান, রেকর্ড এবং পর্চা

খতিয়ান 

জমি ক্রয়-বিক্রয় করার ক্ষেত্রে জমির খতিয়ান সম্পর্কে ভাল ধারণা থাকা আবশ্যক। কেননা অনেকে জমি ক্রয় করার পর অনেক হয়রানির স্বীকার হয়ে থাকেন। এমনকি অনেকে ক্রয়কৃত জমির দখল বুঝে পান না।

খতিয়ান অর্থ হলো ‘হিসাব’। মূলত জমির মালিকানাস্বত্ব রক্ষা ও রাজস্ব আদায়ের জন্য জরিপ বিভাগ কর্তৃক প্রতিটি মৌজার জমির এক বা একাধিক মালিকের নাম, পিতা বা স্বামীর নাম, ঠিকানা, দাগ নম্বর, ভূমির পরিমাণ, হিস্যা (অংশ), খাজনা ইত্যাদি বিবরণসহ যে ভূমি-স্বত্ব প্রস্তুত করা হয় তাকে খতিয়ান বা Record of Rights বলে।

এক কথায়, ভূমি জরিপ হওয়ার পর জমির মালিকানা প্রমাণের জন্য ভূমি মালিকদের যে রেকর্ড দলিল প্রদান করা হয় তাকে জমির খতিয়ান বা পর্চা বলা হয়। 

খতিয়ান খতিয়ান, রেকর্ড এবং পর্চা

পর্চা ও মাঠ পর্চা

যখন পৃথক একটি কাগজে খতিয়ানের অনুলিপি তৈরী করা হয় তখন তাকে পর্চা বলা হয়। এই অনুলিপি সাধারণত হাতে লিখে বা কম্পোজ করে তৈরী করা হয়ে থাকে। অনুলিপি যখন রেকর্ড রুমের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্তৃক স্বাক্ষরিত হয় তখন তাকে নকল বা Certified Copy বলে। সহজ কথায় পর্চা হল হাতে লিখিত বা Compose কৃত খতিয়ানের কপি বা খসড়ার রূপ।

সিএস, এসএ এবং আরএস পর্চা

আমরা সিএস, এসএ এবং আরএস পর্চার নাম শুনে থাকি। সিএস, এসএ এবং আরএস পর্চা হলো আসলে বিভিন্ন রেকর্ডের খসড়া বা অনুলিপি বা কপি। কাজেই পর্চা সিএস, এসএ, আরএস বা মহানগর জরিপ এই ৪ প্রকার হতে পারে। এছাড়া জরিপ চলাকালে প্রাথমিকভাবে হাতে লেখা একটি খসড়া বিবরণ যাচাইয়ের জন্য জমির মালিককে দেওয়া হয়। একে মাঠ পর্চা বা হাত পর্চা বলে।

পর্চা কোথায় পাওয়া যায়?

পর্চা বা রেকর্ডের সহি মুহুরী নকল (Certified Copy) পাওয়া যায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় (DC office)- এর রেকর্ডরুমে। নির্ধারিত ফি সহ আবেদন করলে রেকর্ড রুম থেকে পর্চা সরবরাহ করা হয়। পর্চা কখনও কোনও দালালের কাছ থেকে নেওয়া যৌক্তিক নয়। এতে ভুল থাকতে পারে। কেবলমাত্র ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার স্বাক্ষরসহ পর্চা-ই আসল বা Authentic.

পর্চা কেন প্রয়োজন?

জমির মালিকানা সংক্রান্ত বিবরণ, জমির খতিয়ান-দাগ, অংশ, হিসসা, শ্রেণি ইত্যাদি জানার জন্য পর্চা প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে জমি কেনাবেচার সময় পর্চা যাচাইয়ের প্রয়োজন হয়। পর্চা যাচাই করার জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি অফিস, এসি (ল্যান্ড) অফিস বা রের্কডরুমে যোগাযোগ করা যেতে পারে।

খতিয়ান খতিয়ান, রেকর্ড এবং পর্চা

 

 খতিয়ান ফরম

খতিয়ানে অন্তর্ভূক্ত বিষয়সমূহ

খতিয়ানে কী কী বিষয় অন্তর্ভূক্ত করতে হবে সে সম্পর্কে রাষ্ট্রীয় অর্জন বিধিমালার ১৮ নম্বর বিধিতে বিবৃত করা হয়েছে। এ বিধি অনুযায়ী নিম্ন লিখিত বিবরণসূমহ অন্তর্ভূক্ত করতে হবে:

(ক) প্রজা বা দখলদারের নাম, পিতার নাম ও ঠিকানা

(খ) প্রজা বা দখলদার কোন শ্রেণির অন্তর্ভূক্ত

(গ) প্রজা বা দখলদার কতৃক অধিকৃত জমির অবস্থান শ্রেণি, পরিমান ও সীমানা

(ঘ) প্রজার জমির মালিকের নাম, পিতার নাম ও ঠিকানা

(ঙ) এস্টেটের মালিকের নাম, পিতার নাম ও ঠিকানা

(চ) খতিয়ান প্রস্তুতের সময় খাজনা এবং ২৮,২৯,৩০ বিধি মোতাবেক নির্ধারিত খাজনা

(ছ) গোচরণ, ভূমি, বনভূমি ও মৎস্য খামারের জন্য ধারণকৃত অর্থ

(জ) যে পদ্ধতিতে খাজনা ধার্য করা হয়েছে তার বিবরণ

(ঝ) যদি খাজনা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে তাহলে যে সময়ে ও যে পদক্ষেপে বৃদ্ধি পায় তার বিবরণ

(ঞ) কৃষি কাজের উদ্দেশ্যে প্রজা কতৃক পানির ব্যবহার এবং পানি সরবরাহের জন্য যন্ত্রপাতি সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কিত প্রজা ও জমির মালিকের মধ্যে অধিকার ও কর্তব্যের বিবরণ

(ট) প্রজাস্বত্ব সম্পর্কিত বিশেষ শর্ত ও তার পরিণতি

(ঠ) পথ চলার অধিকার ও জমি সংলগ্ন অনান্য ইজমেন্টের অধিকার

(ড) নিস্কর জমি তার বিবরণ

(ঢ) ২৬ নং ধারা অনুযায়ী নির্ধারিত ও ন্যায়সঙ্গত খাজনা

এছাড়া একটি খতিয়ানে তার নিজস্ব খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর, বাট্টা নম্বর, এরিয়া নম্বর, মৌজা নম্বর ও জে, এল, নম্বর থাকে।

খতিয়ানে ব্যবহৃত কিছু গুরুত্বপূর্ণ শব্দের অর্থ

মৌজা: যখন CS জরিপ করা হয় তখন থানা ভিত্তিক এক বা একাধিক গ্রাম, ইউনিয়ন, পাড়া, মহল্লা অালাদা করে বিভিন্ন এককে ভাগ করে ক্রমিক নাম্বার দিয়ে চিহ্তি করা হয়েছে। আর বিভক্তকৃত এই প্রত্যেকটি একককে মৌজা বলে।

তফসিল: জমির পরিচয় বহন করে এমন বিস্তারিত বিবরণকে “তফসিল” বলে। তফসিলে, মৌজার নাম, নাম্বার, খতিয়ার নাম্বার, দাগ নাম্বার, জমির চৌহদ্দি, জমির পরিমাণ সহ ইত্যাদি তথ্য সন্নিবেশ থাকে।

দাগ: যখন জরিপ ম্যাপ প্রস্তুত করা হয় তখন মৌজা নক্সায় ভূমির সীমানা চিহ্নিত বা সনাক্ত করার লক্ষ্যে প্রত্যেকটি ভূমি খন্ডকে আলাদা আলাদ নাম্বার দেয়া হয়। আর এই নাম্বারকে দাগ নাম্বার বলে। একেক দাগ নাম্বারে বিভিন্ন পরিমাণ ভূমি থাকতে পারে। মূলত, দাগ নাম্বার অনুসারে একটি মৌজার অধীনে ভূমি মালিকের সীমানা খূটিঁ বা আইল দিয়ে সরেজমিন প্রর্দশন করা হয়।

ছুটা দাগ: ভূমি জরিপকালে প্রাথমিক অবস্থায় নকশা প্রস্তুত অথবা সংশোধনের সময় নকশার প্রতিটি ভূমি এককে যে নাম্বার দেওয়া হয় সে সময় যদি কোন নাম্বার ভুলে বাদ পড়ে তাবে ছুটা দাগ বলে। আবার প্রাথমিক পর্যায়ে যদি দুটি দাগ একত্রিত করে নকশা পুনরায় সংশোধন করা হয় তখন যে দাগ নাম্বার বাদ যায় তাকেও ছুটা দাগ বলে।

খানাপুরি: জরিপের সময় মৌজা নকশা প্রস্তুত করার পর খতিয়ান প্রস্তুতকালে খতিয়ান ফর্মের প্রত্যেকটি কলাম জরিপ কর্মচারী কর্তৃক পূরণ করার প্রক্রিয়াকে খানাপুরি বলে।

আমিন: ভূমি জরিপের মাধ্যমে নকশা ও খতিয়ান প্রস্তত ও ভূমি জরিপ কাজে নিজুক্ত কর্মচারীকে আমিন বলে।

কিস্তোয়ার: ভূমি জরিপ কালে চতুর্ভুজ ও মোরব্বা প্রস্তত করার পর সিকমি লাইনে চেইন চালিয়ে সঠিকভাবে খন্ড খন্ড ভুমির বাস্তব ভৌগলিক চিত্র অঙ্কনের মাধ্যমে নকশা প্রস্তুতের পদ্ধতিকে কিস্তোয়ার বলে।

খাজনা: সরকার বার্ষিক ভিত্তিতে যে প্রজার নিকট থেকে ভূমি ব্যবহারের জন্য যে কর আদায় করে তাকে খাজনা বলে।

দাখিলা: ভূমি কর/খাজনা আদায় করে যে নির্দিষ্ট ফর্মে ( ফর্ম নং১০৭৭) ভূমি কর/খাজনা আদায়ের প্রমাণপত্র বা রশিদ দেওয়া হয় তাকে দাখিলা বলা হয়।

DCR: ভূমি কর ব্যতিত আন্যান্য সরকারি পাওনা আদায় করার পর যে নির্ধারিত ফর্মে (ফর্ম নং ২২২) রশিদ দেওয়া হয় তাকে DCR বলে।

কবুলিয়ত: সরকার কর্তৃক কৃষককে জমি বন্দোবস্ত দেওয়ার প্রস্তাব প্রজা কর্তৃক গ্রহণ করে খাজনা প্রদানের যে অঙ্গিকার পত্র দেওয়া হয় তাকে কবুলিয়ত বলে।

ফারায়েজ: ইসলামি বিধান মোতাবেক মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বন্টন করার নিয়ম ও প্রক্রিয়াকে ফারায়েজ বলে।

ওয়ারিশ: ওয়ারিশ অর্থ উত্তরাধিকারী । ধর্মীয় বিধানের অনুয়ায়ী কোন ব্যক্তি উইল না করে মৃত্যু বরন করলেতার স্ত্রী, সন্তান বা নিকট আত্মীয়দের মধ্যে যারা তার রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে মালিক হওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন এমন ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণকে ওয়ারিশ বলে।

সিকস্তি: নদী ভাংঙ্গনের ফলে যে জমি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যায় তাকে সিকন্তি বলে। সিকন্তি জমি যদি ৩০ বছরের মধ্যে স্বস্থানে পয়ন্তি হয় তাহলে সিকন্তি হওয়ার প্রাক্কালে যিনি ভূমি মালিক ছিলেন তিনি বা তাহার উত্তরাধিকারগন উক্ত জমির মালিকানা শর্ত সাপেক্ষ্যে প্রাপ্য হবেন।

পয়ন্তি: নদী গর্ভ থেকে পলি মাটির চর পড়ে জমির সৃষ্টি হওয়াকে পয়ন্তি বলে।

হাল খতিয়ান: কোনো এলাকার সর্বশেষ জরিপে খতিয়ানের রেকর্ড প্রস্তুত হওয়ার পর সরকারি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ঘোষিত হয়ে বর্তমানে চালু আছে এমন খতিয়ানকে হাল খতিয়ান বলে ।

সাবেক খতিয়ান: হাল খতিয়ানের পূর্ব পর্যন্ত চালু খতিয়ানকে সাবেক খতিয়ান বলে, যা বর্তমানে চালু নেই তবে জমির ইতিহাস বুঝতে এর গুরুত্ব অনেক বিধায় এর সংরক্ষণ দরকার ।

বিভিন্ন প্রকার বিভিন্ন প্রকার খতিয়ান

খতিয়ান সাধারণত দুই প্রকার:

(১) জরিপ খতিয়ান, এবং

(২) নাম পত্তন খতিয়ান

(১) জরিপ খতিয়ান (Survey or jaripa khatian )

  • সি. এস খতিয়ান (CS Khatian) – (১৮৮৮-১৯৪০)
  • এস. এ খতিয়ান (SA Khatian) – (১৯৫৬-১৯৬২)
  • পি. এস জরিপ (PS Survey) – (১৯৫৬–১৯৬২)
  • আর. এস খতিয়ান (R. S. Khatian) – Revitionel Survey
  • বি. এস খতিয়ান (B. S Khatian) – বাংলাদেশ Survey (১৯৪০)
  • সিটি জরিপ (City survey) – (১৯৯৯-২০০০)
  • দিয়ারা জরিপ (Diara survey) – দিয়ারা জরিপ আরম্ভ হয় ১৮৬২ সালে

(২) নাম পত্তন খতিয়ান: কোন কারণে জমি হস্তান্তর হলে খতিয়ানে পুরোনো মালিকের নাম বাদ দিয়ে নতুন মালিকের নাম প্রতিস্থাপন করানোকে নামজারি বা মিউটেশন বলে। বাংলাদেশে ১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাসত্ত্ব আইন অনুযায়ী এর কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ৪ ধরনের খতিয়ান বেশি দেখা যায়। যথা: ১। সি. এস খতিয়ান, ২। এস. এ খতিয়ান, ৩। আর. এস খতিয়ান, ৪। বি. এস খতিয়ান/সিটি জরিপ। এগুলো ছাড়াও অন্যান্য খতিয়ান সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো:

১। C. S. (Cadastrat Survey): সি. এস. জরিপ হচ্ছে ব্রিটিশ সরকার ১৮৮৮ সাল থেকে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত বাংলায় সর্বপ্রথম যে জরিপ পরিচালনা করেন তাকে সি. এস. বা Cadastrat Survey জরিপ বলা হয়। এই জরিপের ফলে জমির যে রেকর্ড তৈরি করা হয় তাকে সি.এস. খতিয়ান বলে। 

সি.এস. জরিপ শুরু হয় কক্সবাজারের রামু থানা থেকে এবং শেষ হয় দিনাজপুরে। এই জরিপ প্রথম হলেও বিচার শালিস কিংবা আদালতে নির্ভুল হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এর জরিপের মাধ্যমে তৈরি নকশাকে সিএস নকশা এবং পর্চাকে সিএস খতিয়ান বলা হয়। মামলা-মোকদ্দমায় কিংবা বিবাদ মিমাংশার ক্ষেত্রে এই খতিয়ানকে ভিত্তি হিসাবে ধরা হয়ে থাকে। এই জরিপ ব্রিটিশ সরকার পরিচালনা করে। আমাদের দেশে এটিই প্রাথমিক খতিয়ান হিসাবে বিবেচিত।

২। S. A. (State Acqusition): পাকিস্তান আমলে ১৯৫০ সালে রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের চতুর্থ অধ্যায়ের ১৭ হতে ৩১ ধারা মতে ১৯৫৬-৬০ সালের দিকে যে খতিয়ান তৈরি করা হয় তাকে এস. এ (State Acquision) খতিয়ান বলে। এই জরিপ মাঠপর্যায়ে না গিয়ে, সি.এস. জরিপ-এর উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। তাই এতে প্রচুর ভুল-ত্রুটি পাওয়া যায়।

ব্রিটিশ আমলে জমিদারী প্রথা চালু হয়। ব্রিটিশ সরকার চলে যাওয়ার পর রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহন ও প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০ এর মাধ্যমে জমিদারী প্রথা উচ্ছেদ করা হয়। ফলে জমিদারদের নিকট থেকে অধিগ্রহনকৃত জমির হিসাব নির্ণয়, বিলুপ্তি জমিদারীর ক্ষতিপূরন প্রদান, জমির দখলদার রায়তদের জমির মালিক হিসাবে সরকারের অধীনে আনয়ন ও মালিকানার স্বীকৃতি প্রদান প্রভৃতি কারণে ভূমি জরিপ প্রয়োজন হয়। 

সি.এস. রেকর্ড সংশোধন করার লক্ষে জমিদারদের নিকট থেকে কাগজপত্র সংগ্রহের পর যে জরিপ হয় তাকে এস. এ জরিপ বলে। এই জরিপে সরকারি আমিনগণ সরেজমিনে না গিয়ে টেবিলে বসে সি. এস. জরিপ সংশোধন করে করেন। তাই এই জরিপকে টেবিল জরিপও বলা হয়।    

১৯৫৬ থেকে ১৯৬২ এর মধ্যে এই জরিপ পরিচালনা করা হয়। এত সংক্ষিপ্ত সময়ে জমিদারদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এই জরিপ করে খতিয়ান প্রস্তত করা হয় বলে এতে প্রচুর ভুল-ভ্রান্তি পরিলক্ষিত হয়। এই খতিয়ান বাষট্টির খতিয়ান বা এস এ খতিয়ান বলে বিভিন্ন অঞ্চলে পরিচিতি লাভ করে।

৩। R. S. (Revisional Survey): এস. এ. জরিপের মাধ্যমে প্রস্তুতকৃত খতিয়ানে প্রচুর ভুল-ভ্রান্তি পরিলক্ষিত হওয়ায় তা সংশোধনের লক্ষে গঠিত কমিটি সরেজমিন ঘুরে একটি জরিপ পরিচালনার সুপারিশ করে। তৎকালিন সরকার ১৯৫৬ সাল থেকে যে সংশোধনী জরিপ পরিচালনা করে, তাকে আর. এস. জরিপ বলে। আর. এস. জরিপের খতিয়ানকে আর.এস খতিয়ান বলা হয়।

বাংলাদেশ সরকার পূর্বের তৈরিকৃত খতিয়ানের ভুল ত্রুটি সংশোধন করার জন্য নতুনভাবে উদ্যোগ নিয়ে যে খতিয়ান প্রস্তুত করেন তা-ই আর. এস (Revisional Survey) খতিয়ান নামে পরিচিত। ইতোমধ্যেই দেশের অধিকাংশ এলাকায় এ জরিপ শেষ হয়েছে এবং চূড়ান্ত খতিয়ানও প্রকাশিত হয়েছে। তবে কিছু এলাকায় এখনো এ জরিপ চলমান রয়েছে। মনে রাখবেন, বি.এস. জরিপ কিংবা মহানগর জরিপ মূলত আর. এস. জরিপের অন্তর্ভুক্ত।

৪। B. S. (Bangladesh Survey): বাংলাদেশ সরকারের অধীনে ১৯৮০ সালে থেকে জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় তাহাকে বি.এস জরিপ বলে। ইহার হিস্যা সাধারন অংকে লিখা থাকে। যেমন ১,= ১০০০। এই খতিয়ান প্রস্তুতের কার্যক্রম এখনো চলছে। সর্বশেষ এই জরিপ ১৯৯০ সালে পরিচালিত হয়। ঢাকা অঞ্চলে মহানগর জরিপ হিসাবেও পরিচিত।

৫। D.R.R. (Dear Rent Roll): দিয়ারা জরিপ হলো দরিয়া সম্পর্কিত জরিপ। জেগে উঠা নতুন ভূখন্ড (চর) জেলা প্রশাসকের চাহিদার ভিত্তিতে সিকস্তি/পয়স্তির কারণে ভৌগলিক সীমারেখা ও স্বত্বের পরিবর্তন হলে নদী ও সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় নতুন জরিপ করা হয়। এ সমস্ত জরিপে নকশা ও রেকর্ড প্রস্তুত করা হয়। এটি অতি পুরাতন জরিপ।

P.S. (Petty Survey): কোন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বা বাদ পরে যাওয়া ভূমিতে জরিপ করাকে P.S. খতিয়ান বলে।

বিভিন্ন প্রকার খতিয়ান চেনার উপায়

. CS খতিয়ান চেনার উপায়:

খতিয়ান খতিয়ান, রেকর্ড এবং পর্চা

ক. এটি উপর থেকে নিচে লম্বালম্বি ভাবে থাকবে

খ. এপিট-ওপিট উভয় পৃষ্ঠায় হবে

গ. প্রথম পৃষ্ঠায় জমিদার এবং প্রজার নামে দু’টি ভাগ থাকবে

ঘ. সবার উপরে লেখা থাকবে “বাংলাদেশ ফরম নং ৫৪৬৩” (এটি সব ফরমে একই থাকবে)

ঙ. অপর পৃষ্ঠায় “উত্তর সীমানা” নামে একটি কলাম থাকবে।

. SA খতিয়ান চেনার উপায়:

খতিয়ান খতিয়ান, রেকর্ড এবং পর্চা

 

ক. এই খতিয়ান সবসময় আড়াআড়ি ভাবে হয়

খ. এটি সবসময় হাতে লেখা হয় (প্রিন্ট হবে না)

গ. এই খতিয়ানে সাবেক খতিয়ানের (CS) এবং হাল নম্বরটি থাকবে

ঘ. এটি এক পৃষ্ঠায় হবে

. RS খতিয়ান চেনার উপায়:

খতিয়ান খতিয়ান, রেকর্ড এবং পর্চা

ক. ফরম-এর সবার উপরে হাতের ডান পাশে লেখা থাকবে “রেসার্তে নং”

খ. আগে সাধারনত দুই পৃষ্ঠায় হত, এখন এই খতিয়ান এক পৃষ্ঠায় হয়

গ. এটিও উপর থেকে নিচে লম্বালম্বিভাবে হয়

. City Survey খতিয়ান চেনার উপায়ঃ

খতিয়ান খতিয়ান, রেকর্ড এবং পর্চা

 

ক. এই খতিয়ানে নয়টি কলাম থাকবে

খ. এতে আরও বলা থাকবে কী ধরনের জমি নিয়ে খতিয়ানটি (যেমন: নাল-জমি, পুকুর)

. Mutation খতিয়ান চেনার উপায়:

ক. এই খতিয়ানের বাম পাশে হাতে লেখা থাকবে “নামজারি”।

 

জমির খতিয়ান কোথায় এবং কীভাবে পাবেন?

 

জমির খতিয়ান বা পর্চা মূলত চারটি অফিসে পাবেন:

১. ইউনিয়ন ভূমি অফিস   

২. উপজেলা ভূমি অফিস 

৩. জেলা ডিসি অফিস  

৪. সেটেলমেন্ট অফিস 

. ইউনিয়ন ভূমি অফিস বা তফসিল অফিস: এই অফিসে যদিও খতিয়ান বা পর্চার বালাম বহি থাকে কিন্তু আপনি এই অফিসে হতে খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি নিতে পারবেন না। এই অফিস হতে শুধু খসরা খতিয়ান নিতে পারবেন যেটা আইনত কোন মূল্য নেই তারপরেও এই অফিসটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ আপনার জমির খতিয়ান নাম্বার না জানলে এই অফিস থেকে জেনে নিতে পারবেন।জমির খাজনা বা ভূমি উন্নয়ন কর এই অফিসে দিতে হয়। 

২. উপজেলা ভূমি অফিস: যদিও উপজেলা ভূমি অফিসের মূল কাজ নামজারী বা খারিজ বা মিউটেশন করা তবে খসরা খতিয়ান তুলতে পারবেন। এই অফিস হতেও খতিয়ানের সার্টিফাইড পর্চা বা কোর্ট পর্চা তুলতে পারবেন না।

. জেলা ডিসি অফিস: এই অফিস হতে পর্চা বা খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি সংরক্ষণ করতে পারবেন। এই অফিসের খতিয়ান এর গুরুত্ব সর্বাধিক। সব জায়গায় এই অফিসের খতিয়ান এর গুরুত্ব রয়েছে। এই অফিস হতে সিএস, এসএ, আরএস, বিএস যেকোনো মৌজা ম্যাপ সংগ্রহ করা যাবে।

৪. সেটেলমেন্ট অফিস: শুধুমাত্র নতুন রেকর্ড বা  জরিপের পর্চা / খতিয়ান এই অফিস হতে সংগ্রহ করা যাবে।   পাশাপাশি নতুন রেকর্ড এর ম্যাপ ও  সংগ্রহ করা যায়। 

* জমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর, (তেজগাঁও সাতরাস্তার মোড়), ঢাকা: সারা বাংলাদেশের যেকোনো মৌজা ম্যাপ  সিএস, এসএ, আরএস, বিএস, জেলা ম্যাপ, বাংলাদেশ ম্যাপ তুলতে পারবেন। এই অফিসের ম্যাপের গ্রহণযোগ্যতাও বেশি। সারা বাংলাদেশের যেকোনো ম্যাপ এই অফিসে পাওয়া যায়।

জরিপ কার্য়ক্রমের বিভিন্ন স্তরের নাম, সেবার বিবরণ,  ভূমি মালিকের করণীয়,  সেবা প্রদানে নিয়োজিত কর্মকর্তা/কর্মচারি

 ১।  বিজ্ঞপ্তি:  ভূমি জরিপ আরম্ভের পূর্বে ১৯৫০ সালের বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইনের ১৪৪(১) ধারা এবং বঙ্গীয় জরিপ আইনের ০৩ ধারায় ক্ষমতা প্রাপ্ত হয়ে ………..অফিসার কর্তৃক ……. আইনে ৫, ৭ ধারার নোটিশ প্রদান। জরিপ শুরুর পূর্বে মাইকিং ও পত্রিকায় বিজ্ঞাপনসহ ব্যাপক জনসংযোগ করা হয়। এসময় ভূমি মালিকগণকে নিজ নিজ জমির আইল/ সীমানা চিহ্নিত করে রাখতে হবে। জমির মালিকানায় সমস্ত দলিল/ কাগজপত্র হালনাগাদ অবস্থায় কাছে রাখতে হবে।

 ২।  ট্রাভার্স: কোন মৌজার নকশা সম্পূর্ণ নতুন করে প্রস্তুত করতে মৌজায় যে  কাঠামো স্থাপন করা হয় সেটাই ট্রাভার্স। অতঃপর পি ৭০ সিটের মাধ্যমে মৌজার নতুন  নকশা প্রস্ত্তত করা হয়। কোন মৌজার পুরোনো নকশা অর্থাৎ ব্লু-প্রিন্ট সিটের উপর জরিপ করার ক্ষেত্রে ট্রাভার্স করা হয় না। ট্রাভার্স পরিচালনা করেন একজন সার্ভেয়ারের নেতৃত্বে একদল জরিপ কর্মচারি।

 ৩। কিস্তোয়া: এই স্তরে আমিনদল প্রতি খন্ড জমির পরিমাপ করে তা  মৌজা  নকশায় প্রতিফলিত করে নতুন নকসা  অংকনের মাধ্যমে কিস্তোয়ার সম্পন্ন করে  অথবা ব্লু-প্রিন্টে পুরোনো নকশা সংশোধন করেন। এ স্তরের কাজ একজন উপ-সহকারি সেটেলমেন্ট অফিসার (কানুনগো)-এর তত্বাবধানে আমিনদল করে থাকেন।

৪। খানাপুরি: কিস্তোয়ার স্তরে অঙ্কিত নকশার প্রত্যেকটি দাগের জমিতে উপস্থিত হয়ে আমিনদল জমির দাগ নম্বর প্রদান করেন এবং মালিকের রেকর্ড, দলিলপত্র ও দখল যাচাই  করে মালিকের নাম, ঠিকানা ও অন্যান্য তথ্য খতিয়ানে লিপিবদ্ধ (খানাপুরি) করেন। এ স্তরে ভূমি মালিকদের কাজ হচ্ছে আমিনদলকে জমির মালিকানা ও দখল সংক্রান্ত প্রমাণাদি উপস্থাপন করা।এ স্তরের কাজ একজন উপ-সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার (কানুনগো)-এর তত্বাবধানে আমিনদল করে থাকেন।

৫।  বুঝারত: এর অর্থ জমি বুঝিয়ে দেয়া। এ স্তরে আমিনদল কর্তৃক প্রস্তুতকৃত খাতিয়ান বা পর্চা জমির মালিককে সরবরাহ (বুঝারত) করা হয়, যা মাঠ পর্চা নামে পরিচিত। পর্চা বিতরণের তারিখ নোটিশ/ পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রচার/ এলাকায় মাইকিং-এর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়। ভূমি মালিকগণ প্রাপ্ত পরচার সঠিকতা যাচাই করে কোনরূপ সংশোধন বা পরিবর্তন আবশ্যক হলে নির্দিষ্ট (Dispute) ফরম পূরণ করে তা আমিনের নিকট জমা দেবেন। একজন উপ-সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার (কানুনগো) হল্কা অফিসার হিসাবে সংশ্লিষ্ট পক্ষগণের শুনানির মাধ্যমে দ্রুত ঐসকল বিবাদ-নিস্পত্তি করবেন।

৬। খানাপুরি ও বুঝারত:  যখন কোন মৌজা ট্রাভার্স এবং কিস্তোয়ারের মাধ্যমে ব্লু-প্রিন্ট সিটে জরিপ করা হয় সে সময় উপরে বর্ণিত খানাপুরী ও বুঝারত স্তরের কাজ একসাথে করা হয়। সরদার আমিন/হল্কা অফিসার বা কানুনগো/ক্যাডাস্ট্রাল সার্কেল অফিসার।

 ৭। তসদিক বা অ্যাটাস্টেশন: ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে তসদিক স্তরের কাজ সম্পাদিত হয় তসদিক স্তরের কাজ সম্পাদন করেন একজন কানুনগো বা রাজস্ব অফিসার। জমির মালিকানা সংক্রান্ত সকল কাগজপত্র ও প্রমাণাদি যাচাই করে প্রতিটি বুঝারত খতিয়ান সত্যায়ন করা হয়। এ স্তরেও ভূমি মালিকগণ পর্চা ও নকশার কোন সংশোধন প্রয়োজন মনে করলে বিবাদ (Dispute) দাখিল করতে পারেন এবং উপযুক্ত প্রমান উপস্থাপন করে তা সংশোধনের সুযোগ নিতে পারেন। তসদিককৃত পর্চা জমির মালিকানায় প্রাথমিক আইনগত ভিত্তি  (primary Legal Document) হিসেবে বিবেচিত হয়। তাই এ স্তরের কাজটি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 ৮। খসড়া প্রকাশনা  (ডিপি) ও আপত্তি দায়ের: তসদিকের পর জমির প্রণীত রেকর্ড সর্বসাধারণের প্রদর্শনের জন্য ৩০ দিন উম্মুক্ত রাখা হয়। এর সময়কাল উল্লেখপূর্বক ক্যাম্প অফিস হতে বিজ্ঞপ্তিও প্রচার করা হয়। ভূমি মালিকগণের নামের অদ্যাক্ষর অনুযায়ী খতিয়ান বা পর্চা বর্ণনাক্রমিক ক্রমবিন্যাস করে খতিয়ানে নতুন নম্বর অর্থাৎ ডিপি নম্বরটি সংগ্রহের জন্য ও ভূমি মালিকগণকে নিজ নিজ পর্চাসহ খসড়া প্রকাশনা (ডিপি) ক্যাম্পে উপস্থিত হতে হয়। 

ডিপিতে প্রকাশিত খতিয়ান সম্পর্কে কারো কোন আপত্তি বা দাবি থাকলে সরকার ১০ (দশ) টাকার কোর্ট ফি দিয়ে নির্দিষ্ট ফরম পূরণের মাধ্যমে প্রজাস্বত্ব বিধিমালার ৩০ বিধি অনুযায়ী আপত্তি দায়ের করা যাবে। তসদিক অফিসার/ খসড়া প্রকাশনা অফিসার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন (উপ-সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার)

 ৯। আপত্তি শুনানি: ডিপি চলাকালে গৃহীত আপত্তি মামলাসমূহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগণকে নোটিশ মারফত জ্ঞাত করে নির্দিষ্ট তারিখ, সময় ও স্থানে শুনানি গ্রহন করে নিস্পত্তি করা হয়। পক্ষগণ নিজে অথবা মনোনীত প্রতিনিধির মাধ্যমে নিজ নিজ দাবি আপত্তি অফিসারের নিকট উপস্থাপন করতে পারেন। আপত্তি অফিসার পক্ষগণকে শুনানি দিয়ে, রায় কেস নথিতে লিপিবদ্ধ করে তার সিদ্ধান্ত জানাবেন এবং সিদ্ধান্তের আলোকে খতিয়ান বা রেকর্ড প্রয়োজনীয় সংশোধন আনবেন। আপত্তি অফিসার/ সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার, উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসার

 ১০। আপিল শুনানি:  আপত্তির রায়ে সংক্ষুদ্ধ পক্ষ ৩১ বিধিতে আপিল দায়ের করতে পারেন। নির্ধারিত কোর্ট ফি এবং কার্টিজ পেপারসহ সেটেলমেন্ট অফিসার বরাবর আবেদন দাখিলের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট আপত্তি মামলার রায়ের ঐ নকলসহ আপিল দায়ের করতে হবে। সংশ্লিষ্ট পক্ষকে নোটিশ মারফত জ্ঞাত করে নির্দিষ্ট তারিখ, সময় ও স্থানে শুনানী গ্রহন করে আপিল নিস্পত্তি করা হয়। সহকারি সেটেলমেন্ট অফিসার/চার্জ অফিসার, জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার

জমির রেকর্ড বা খতিয়ানের ভুল সংশোধনের পদ্ধতি

১। The State Acquisition and Tenancy Act, 1950 এর ৪৩ ধারা মতে, এবং প্রজাস্বত্ব বিধিমালা, ১৯৫৫ এর বিধি ২৩ এর উপবিধি (৩) অনুযায়ী চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত রেকর্ডের করনিক ভুল (Clerical Mistake) সংশ্লিষ্ট রাজস্ব কর্মকর্তা যিনি বর্তমানে সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা এসি ল্যান্ড হিসেবে কাজ করেন তিনিই  সংশোধন করতে পারেন। 

সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবেদনের প্রেক্ষিতে বা প্রজাস্বত্ব বিধিমালা ১৯৫৫ এর ২২ বিধির উপবিধি (১) অনুযায়ী খতিয়ানে দৃষ্ট করণিক ভুল সংশোধনের জন্য প্রতিবেদন প্রাপ্তির পর পূর্ববর্তী জরিপের কাগজপত্র, প্রাথমিক খাজনা বিবরণী, কালেক্টরের দপ্তরে সংরক্ষিত খতিয়ানের কপি এবং ২ নং রেজিস্ট্রার পর্যালোচনা ক্রমে এবং তিনি যে ধরনের অনুসন্ধান প্রয়োজন মনে করেন, তা করে এরূপ করণিক ভুল সংশোধনের নির্দেশ দেবেন। কালেক্টর কর্তৃক বা ইউনিয়ন (ভূমি) সহকারি কর্মকর্তা কর্তৃক সংরক্ষিত খতিয়ান এবং ২ নম্বর রেজিস্ট্রার অনুযায়ী সংশোধন করার নির্দেশ প্রদান করত সংশোধনলিপির কপি সংশ্লিষ্ট পক্ষকে প্রদান করবেন।

সহকারি কমিশনার (ভূমি) কর্তৃক বিবেচনাযোগ্য করণিক ভুলের মধ্যে নামের ভুল, অংশ বসানোর হিসেবে ভুল, দাগসূচিতে ভুল, ম্যাপের সংঙ্গে রেকর্ডের ভুল, জরিপকালে বাবার মৃত্যুর কারণে সন্তানদের নামে সম্পত্তি রেকর্ড হবার কথা থাকলেও জরিপকারকদের ভুল বা অজ্ঞতার কারণে তা মূল প্রজা বা বাবার নামে রেকর্ড হওয়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

এসব ক্ষেত্রে ইউনিয়ন ভূমি অফিসে থেকে প্রতিবেদন পাঠানোর পর যার নামে খতিয়ানে ভুল নাম এসেছে বা সংশ্লিষ্ট পক্ষকে নোটিশ প্রদান করা হয়। তারপর একটি নির্ধারিত তারিখে উভয়পক্ষের শুনানি গ্রহণ ও দাখিলিয় গজপত্রাদি বিবেচনায় কোনো আপত্তি না থাকলে খতিয়ানের করণিক ভুল সংশোধনের আদেশ দেওয়া হয়। সংশোধিত আদেশ অনুসারে ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা সংশোধিত খতিয়ান প্রস্তুত করে পেশ করেন এবং কানুনগো প্রয়োজনীয় রেকর্ড সংশোধন করেন। সংশোধনের পুরো পক্রিয়া সম্পন্ন হতে সাধারণত সময় লাগে ৩০-৩৫ দিন।

আবেদনের সাথে যেসব কাগজপত্র জমা দিতে হবে:

১। সর্বশেষ নামজারি, সিএস, আর.এস, এসএ, বিএস, খতিয়ানের সত্যায়িত ফটোকপি/ সার্টিফাইড কপি
২। সংশ্লিষ্ট মৌজার এসএ ও বিএস মৌজা ম্যাপ
৩। ওয়ারিশ সনদপত্র (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) [অনধিক ০৩ মাসের মধ্যে ইস্যুকৃত] ৪। মূল দলিলের ফটোকপি/ সার্টিফাইড কপি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
৫। সর্বশেষ জরিপের পর থেকে ভায়া/প্রিন্ট দলিল (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
৬। ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের দাখিলা পত্র
৭। আদালতের রায়/আদেশ/ডিক্রির সার্টিফাইড কপি
৮। আদালতের রায়/আদেশ/ডিক্রি থাকলে আরজির সার্টিফাইড কপি
৯। বিএস জরিপের মাঠপর্চা, ডিপি খতিয়ান ইত্যাদি

একইভাবে প্রতারণামূলক লিখনের (Fraudulent Entry) মাধ্যমে সৃষ্ট চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত রেকর্ড সংশোধনের জন্য প্রাপ্ত আবেদন অথবা প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজস্ব কর্মকর্তা প্রজাস্বত্ব বিধিমালা, ১৯৫৫ এর বিধি ২৩ এর উপবিধি (৪) অনুযায়ী রেকর্ড সংশোধনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

খতিয়ান সংশোধন ফি ১১৫০ টাকা জমা দিয়ে ডিসিআর এবং সংশোধিত খতিয়ানের কপি উপজেলা/সার্কেল ভূমি অফিস থেকে সংগ্রহ করা যাবে।

২। The State Acquisition and Tenancy Act, 1950 এর ১৪৯ ধারার (৪) উপধারা মতে, Board of Land Administration যে কোনো সময় যে কোনো খতিয়ানে বা চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত সেটেলমেন্ট রেন্ট-রোলে অন্তর্ভুক্ত যথার্থ ভুল (Bonafide Mistake) সংশোধনের আদেশ দিতে পারেন। কিন্তু Board of Land Administration বর্তমানে বিলুপ্ত বিধায় এ ক্ষমতা সরকারের পাশাপাশি ভূমি আপিল বোর্ডের রয়েছে।

৩। ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল সর্বশেষ জরিপে প্রকাশিত খতিয়ানের বিষয়ে যে কোনো আদেশ প্রদানে এখতিয়ারবান। জরিপ পরবর্তী স্বত্বলিপি গেজেটে চূড়ান্ত প্রকাশনার পর কোন সংশোধনীর দাবি থাকলে তা ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল, ল্যান্ড সার্ভে আপিল ট্রাইব্যুনাল এবং সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচার্য।

অর্থাৎ আপনার খতিয়ানে যে কোনো ধরনের ভুল হোক না কেন ভুলের ধরণ অনুসারে উপরিউক্ত তিনভাবেই তা সংশোধন সম্ভব।

বি.এস খতিয়ানে ভুল হলে মামলা কখন এবং কোথায় করতে হবে?

বি,এস খতিয়ানে ভুল হলে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যালে মামলা দায়ের করতে হবে। মৌজার খতিয়ানের গেজেট প্রকাশিত হওয়ার ১ বছরের মধ্যে মামলা দায়ের করতে হবে। তবে তামাদি দরখাস্ত দিয়ে আরও ১ বছরের মধ্যে মামলা দায়েরের বিধান আছে। ২ বছর অতিক্রম করলে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যালে আর মামলা দায়ের করা যাবে না। ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যালে মামলা করার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে দেওয়ানি আদালতে স্বত্ব প্রচার বা ঘোষণা মূলক মোকদ্দমা করা যায়। মামলা করার জন্য খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি বা সই মুহুরি খতিয়ান ধরনের খতিয়ান আদালতে জমা দিতে হয়।

ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে নেওয়া খসড়া খতিয়ান দিয়ে মামলা করা যায় না, মামলার জন্য সার্টিফাইড কপি দিতে হবে। চূড়ান্ত প্রকাশনাকালীন সরকার-নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ সাপেক্ষে উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসের আওতাধীন খতিয়ান চুড়ান্ত প্রকাশনা ক্যাম্প হতে সংগ্রহ করা যায। চূড়ান্ত প্রকাশনা সমাপনান্তে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের দপ্তরে রেকর্ড হস্তান্তর করা হয়। রেকর্ড হস্তান্তরের পর জেলা প্রশাসকের রেকর্ড রুম থেকে খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি (পরচা) সংগ্রহ করা যায়। সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসক রেকর্ডের কাস্টডিয়ান। জেলা প্রশাসকের রেকর্ড রুম ছাড়া অন্য কোন দ্প্তর হতে খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি (পরচা) সংগ্রহের সুযোগ নেই।

খতিয়ান খতিয়ান, রেকর্ড এবং পর্চা

অনলাইনে জমির খতিয়ান নিতে চাইলে কিংবা অনলাইনে খতিয়ান/পর্চা যাচাই/তথ্য অনুসন্ধান

rsk.land.gov.bd বা www.minland.gov.bd বা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অনলাইনে আরএস খতিয়ানের কপি সংগ্রহ করা যাবে।

অনলাইনে খতিয়ানের কপি পেতে অনলাইনে আবেদনের সময় নাগরিকের নাম, পরিচয়পত্র নম্বর (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ও ফোন নম্বর ইত্যাদি তথ্য দিতে হবে। নির্ধারিত তথ্য দেয়ার পর মোবাইল ব্যাংকিং বা অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে খতিয়ানের জন্য নির্ধারিত ফি দিতে হবে। ফি পরিশোধের পর অনলাইন কপি সংগ্রহ করতে চাইলে সরাসরি অনলাইন কপি প্রিন্ট করে নেয়া যাবে। 

এছাড়া, সার্টিফাইড কপি পাওয়ার ক্ষেত্রে আবেদনের সময় নাগরিকের নাম, পরিচয় পত্র নম্বর, ফোন নম্বর ইত্যাদি দিতে হবে। তথ্য প্রদানের পর মোবাইল ব্যাংকিং বা অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে খতিয়ানের জন্য ফি দিতে হবে। ফি দেয়ার পর সার্টিফাইড কপির জন্য নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র, ই-মেইল, মোবাইল নম্বর, ট্রানজেকশন আইডি ও ডাকযোগে যোগাযোগের ঠিকানা দিয়ে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। এরপর সংশ্লিষ্ট জেলা অফিস থেকে বা আবেদনকারীর প্রত্যাশিত ঠিকানায় ডাকযোগে নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে আরএস খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি সরবরাহ করা হবে।

অনলাইন হতেই আপনি আপনার পরচা যাচাই করতে পারেন। আপনি চাইলে পরচা বা খতিয়ানের সার্টিফাইট কপির জন্য আবেদন করতে পারবেন। অনলাইন কপি আপনি কোন কাজে ব্যবহার করতে পারবেন না। শুধুমাত্র তথ্য যাচাইপূর্বক সার্টিফাইড কপির জন্য আবেদন করতে পারবেন। এটি প্রিন্ট করেও দেখতে পারবে কিন্তু রেজিস্ট্রির কোন কাজে এটি ব্যবহার করা যাবে না। অনলাইন কপি প্রথমে আপনি যাচাই করে সঠিক পেলে সার্টিফাইড কপির জন্য ফি দিয়ে আবেদন করতে পারেন।

খতিয়ানের তথ্য অনুসন্ধান: http://settlement.gov.bd/khatian/search

এছাড়াও, অনলাইনে জমির খতিয়ান নিতে চাইলেপ্রথমে আপনারা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয়কৃত ওয়েবসাইট www.eporcha.gov.bd যেতে পারেন। সেখানে নাগরিক কর্নার লেখাতে ক্লিক করলে খতিয়ান অনুসন্ধান/আবেদন নামে আপনারা কিছু ফরম পাবেন। তারপর যাবতীয় তথ্য দিয়ে ফরমটি পূরণ করে নির্ধারিত সেবাটি নিতে পারবেন।

এ বিষয়ে আপনাদের কোন কিছু জানার থাকলে বা অনুসন্ধান করার ইচ্ছা থাকলে আপনাদের সুবিধার্থে বাংলাদেশ সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয় একটি হটলাইন সেবা চালু করেছে। যেটার টেলিফোন নম্বর হলো- ১৬১২২। এই নাম্বারে কল করে আপনারা আপনাদের মতামত জানাতে পারবেন।

ভূমি জরিপে নকশা ও রেকর্ডে ভুলের কারণে সম্মানিত ভূমি মালিকগণের সম্ভাব্য প্রশ্ন ও প্রশ্নত্তোর পর্ব:

১। প্রশ্ন: আমার/আমাদের এলাকায়/মৌজায় ভূমি জরিপ শুরু হলে আমার তা কিভাবে জানতে পারবো?

উত্তর: ভূমি জরিপ শুরু হলে মৌজায়/এলাকায় পর্যায়ক্রমে ক ও খ ইস্তেহার জারী করা হয়। প্রচুর গণসংযোগ করা হয়। এমনকি মাইকিং করে সম্মানিত ভূমি মালিকগণকে অবহিত করা হয়।

২। প্রশ্ন: মৌজায় মাঠ কর্মচারী আসলে আমরা কি করবো?

উত্তর: যখন মাঠ কর্মচারীগণ মৌজার নকশা তৈরী শুরু করবে তখন প্রত্যেক ভূমি মালিকের উচিত তাঁর নিজ নিজ জমির আইল সীমানা, বাড়ীর সীমানা সঠিক ভাবে দেখিয়ে দেওয়া যাতে নির্ভুল নকশা প্রস্তুত করা সম্ভব হয়।

৩। প্রশ্ন: নকশা তৈরীর পর আমাদের করণীয় কি?

উত্তর: নকশা তৈরীর পর মাঠ কর্মচারীগণ নকশার প্রতিটি দাগে যাবেন এবং দাগের সঠিক দখল দারের নাম লিখবেন। তখন সঠিক দখলদারে নাম লিখিয়ে দিতে হবে। পরে দখলদারের নামে দখল ভিত্তিক সঠিক বা বৈধ কাগজপত্র যেমন পূর্ববর্তী জরিপের কাগজ বা রেকর্ড বা দলিল বা অন্যান্য কাগজপত্রাদি দেখিয়ে যার যার জমি তার তার নামে রেকর্ড করিয়ে নিতে হবে। এই রেকর্ডের নাম খতিয়ান। প্রতিটি খতিয়ানে সঠিক ভুমি মালিকের নাম থাকবে।

৪। প্রশ্ন: খতিয়ান প্রস্তুতের পর আমাদের করণীয় কি?

উত্তর: ডিজিটাল জরিপের ক্ষেত্রে খতিয়ান/পর্চা হল্কা অফিসার/উপ-সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার কর্তৃক সকল বৈধ কাগজপত্রাদি দেখিয়ে খতিয়ান তসদিক করিয়ে নিতে হবে।

০৫। প্রশ্ন: মাঠ ও তসদিক খতিয়ানে ভুল থাকলে আমাদের করণীয় কি?

উত্তর: মাঠ ও তসদিককৃত খতিয়ানে ভুল পরিলক্ষিত হলে তসদিককৃত খতিয়ান তসদিকোত্তর যাঁচের পরে ৩০ কর্মদিবস ডিপি বা খসড়া প্রকাশনা সংশ্লিষ্ট উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিস বা নির্ধারিত অফিসে দেয়া হবে। সেখানে গিয়ে নকশা ও রেকর্ড পরীক্ষা করে দেখতে হবে নিজের হাতের তসদিককৃত খতিয়ান মূল রেকর্ড বই ও নকশার সাথে মিল আছে কিনা; তা সুন্দর ভাবে বুঝে নিতে হবে। খতিয়ানে মাঠ পর্যায়ের নম্বর পরিবর্তন করে একটি ডিপি নম্বর বসিয়ে নিতে হবে। যাদি কোন ভুল পরিলক্ষিত হয় তবে ডিপি চলাকালীন প্রয়োজনীয় কোর্ট ফি দিয়ে (ডিপি চলাকালীন) ৩০ বিধি আপত্তি দায়ের করতে হবে।

০৬। প্রশ্ন: আপত্তি শুনানীকালে আমাদের/ভূমি মালিকগণের করণীয় কি?

উত্তর: সংশ্লিষ্ট আপত্তি অফিসার কর্তৃক স্বাক্ষরিত নোটিশ জারীকারকের মাধ্যমে ভূমি মালিকগণ পেলে নির্দিষ্ট তারিখে বাদী বিবাদী উভয় পক্ষ তাদের কাগজপত্র আপত্তি অফিসারকে দেখাতে হবে। যদি নকশা সংক্রান্ত ভুল থাকে তবে প্রয়োজনীয় ফ্রি দিয়ে বিধি মোতাবেক বদর আবেদন করতে পারবেন। বদর দাখিল হলে সংশ্লিষ্ট সার্ভেয়ার বদর তদন্ত স্বাপেক্ষে প্রতিবেদন দাখিল করার পর পরবর্তী তারিখে আপত্তি অফিসার রায়ের মাধ্যমে সমাধান দিবেন। যদি বদর প্রয়োজন না হয় তবে আপত্তি অফিসার বাদী/বিবাদীর বক্তব্য ও নকশা পর্চা ও আন্যান্য আনুষঙ্গিক কাগজপত্র পর্যালোচনা করে রায়ের মাধ্যমে আপত্তি নিস্পত্তি করবেন।

৭। প্রশ্ন: কেহ যদি মনে করেন ৩০ বিধি আপত্তি স্তরে তিনি ন্যায় বিচার পাননি । তখন তার করণীয় কি?

উত্তর: কেহ যদি ৩০ বিধি আপত্তি স্তরে আপত্তির রায়ের উপর সংক্ষুব্ধ বা খুশি না হন। তখন তিনি ৩০ বিধির আপত্তির নকল তুলে বিধি মোতাবেক ৩০ কার্য দিবসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট অফিসে ৩১ বিধি আপিল দায়ের করতে পারবেন।

৮। প্রশ্ন: আপিল করণীয় কি?

উত্তর: সংশ্লিষ্ট আপিল অফিসার কর্তৃক স্বাক্ষরিত নোটিশ পাওয়ার পর বাদী/প্রতিবাদী পক্ষ ৩১ বিধি আপিল অফিসারকে যার যার কাগজপত্র প্রদর্শন করবেন। যদি নকশা সংশোধনের বিষয় হয় তবে আপত্তির মতো প্রয়োজনীয় ফ্রি দিয়ে বিধি মোতাবেক বদর দাখিল করিবেন। বদর তদন্ত সমপনান্তে প্রতিবেদন দাখিলের পর শুনানীর মাধ্যমে আপিল নিস্পত্তি করা হবে। যদি বদর প্রয়োজন না হয় তবে বাদী/প্রতিবাদীর বক্তব্য ও আনুষঙ্গিক পর্যালোচনা করে আপিল অফিসার আপিল নিস্পত্তি করতে পারবেন বা করবেন।

০৯। প্রশ্ন: কেহ যদি ৩০ বিধি আপত্তি দাখিল না করেন তবে কি ৩১ বিধির আপিল দাখিল করতে পারবেন?

উত্তর: না। ৩১ বিধির আপিল হচ্ছে ৩০ বিধির আপত্তির রায়ের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত আপিল মামলা। সুতরাং ৩০ বিধি আপত্তি দাখিল না করা হলে ৩১ বিধির আপিল দাখিল করার সুযোগ নেই।

১০। প্রশ্ন: কেহ যদি মনে করেন আপিলেও তিনি সঠিক প্রতিকার পাননি সেক্ষেত্রে তার করণীয় কি?

উত্তর: মৌজার খতিয়ান গেজেট হওয়ার পর যদি ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের শর্তে পরে তবে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করতে পারবেন। মামলায় প্রতিকার যোগ্য হলে প্রতিকার পাবেন।

১১। প্রশ্ন: আমি জমি খরিদ করেছি, দখল করিতেছি, নামজারী করেছি আমার জমি আমার নামে রেকর্ড হলো না কেন?

উত্তর: কোন ভূমি মালিক মাঠ জরিপ হতে ৩০ বিধি আপত্তি স্তর তথা ৩১ বিধি আপিল স্তর পর্যন্ত কোন স্তরেই উপস্থিত না হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে এ ধরণের ভুল রেকর্ড পূর্ববর্তী রেকর্ড মোতাবেক হতে পারে।

১২। প্রশ্ন: বিশেষ করে মহিলা ভূমি মালিকগণ বলেন আমি আমার বাবার সন্তান হয়েও জমি রেকর্ড পেলাম না কেন?

উত্তর: আপনার ভাই/ভাইয়েরা যদি তথ্য গোপন করে রেকর্ড করিয়ে থাকেন বা তারা যদি আপনাকে বাদ দিয়ে অন্যের কাজে বিক্রি করে দখল বুঝিয়ে দিয়ে থাকেন খরিদ্দার/খরিদ্দারগণ দখল ভিত্তিক দলিল পত্র দেখিয়ে রেকর্ড করিয়ে নিয়ে থাকেন তবে এ সবভুল হতে পারে।

১৩। প্রশ্ন: কোন কোন ক্ষেত্রে ভাই প্রবাসী বা কোন কারণে না জানার কারণেও প্রশ্ন করেন আমি একই বাবার সন্তান আমার জমি আমার নামে রেকর্ড হলো না কেন?

উত্তর: অন্য ভাই বা বোন যদি তথ্য গোপন করে নিজের নামে রেকর্ড করিয়ে থাকেন বা বিক্রির কারণে খরিদ্দার/খরিদ্দারগণের নামে দখল ও দলিল মোতাবেক হয়ে থাকে তবে এ ধরণের ভুল হতে পারে।

১৪। প্রশ্ন: আমার প্রয়োজনীয় থাকার পরও আমার জমি আমার নামে কেন রেকর্ড হলো না?

উত্তর: জরিপের সর্বস্তরে নিজে বা কোন প্রতিনিধি উপস্থিত না থাকার জন্য ।

১৫। প্রশ্ন: আমার খতিয়ানের ৯ নং কলামে অন্যের নাম লেখা দেখা যাচ্ছে কেন?

উত্তর: আপানার দখল না থাকার জন্য যার দখল আছে তার নবামে জরিপ বিধি মোতাবেক দখল রেকর্ড দেয়া হয়েছে।

১৬। প্রশ্ন: আমার খতিয়ান/পর্চা ও নকশার দাগ মিলছে না কেন বা দাগ ভুল কেন?

উত্তর: মাঠ কর্মচারীকে হয়তো সঠিক ভাবে দাগ দেখাতে পারে নি। এমনকি জরিপের পরবর্তী স্তর গুলোতেও দাগ ভুল সংশোধনের  কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন নি তা হতে পারে।

১৭। প্রশ্ন: আমার জরিপ পরিমাণ/এরিয়া কম কেন?

উত্তর: আপনার হয়তো দখলে কম জমি আছে। তাই নকশায় কম অংকিত হয়েছে এবং রেকর্ডেও কম হয়েছে।

১৮। প্রশ্ন: আমি যদি না জানার কারণে জরিপের সকল স্তরে অনুপস্থিত থাকি তাহলে আমার জমি কার নামে রেকর্ড হবে?

উত্তর: সাধারণত পূর্ববর্তী রেকর্ড মোতাবেক রেকর্ড হবে।

১৯। প্রুশ্ন: আমি কিভাবে পর্যায়ক্রমে জানতে পারলে আমার জমির রেকর্ড পেতে পারি?

উত্তর: আপনি যদি মাঠ পর্যায়ে অনুপস্থিত থাকেন তবে তসদিক স্তরে পেতে পারেন। তসদিক স্তরে অনুপস্থিত থাকলে ৩০ বিধ অপত্তি স্তরে পেতে পারেন। যদি ৩০ বিধি আপত্তি দায়ের করেও না পান তবে বিধি মোতাবেক ৩১ বিধি মোতাবেক আপিলে প্রতিকার পেতে পারেন।

২০। প্রশ্ন: চূড়ান্ত প্রকাশিত বা ছাপানো খতিয়ানে/পর্চায় ভুল থাকলে কি করতে হবে?

উত্তর: নিজের নিকট গচ্ছিত তসদিককৃত বা যে কোন স্তরের বৈধ খতিয়ান প্রাপ্ত মুদ্রিত খতিয়ানের সাথে গড়মিল হলে  সংশ্লিষ্ট চূড়ান্ত প্রকাশনা অফিসারের নিকট বিধি মোতাবেক আবেদন করতে হবে। যদি করণিক ভুল হয় মূল বই ঠিক থাকে তবে মূল বই অনুসারে ৫৩৩/৫৩৪ বিধি মোতাবেক সংশোধন হবে। মূল বইতে যা আছে নিজের পর্চায় বা খতিয়ানের বা আবেদনের চাহিদা মোতাবেক না হলে সংশোধন যোগ্যনয়। নকশায় কোন করণিক ভুল অর্থ্যাৎ নম্বর ভুল থাকলে তা ৫৩৭ বিধি মোতাবেক সংশোধন যোগ্য। আবেদনে অবশ্যই বিধি মোতাবেক ৩০ কর্মদিবসের  মধ্যে বা চূড়ান্ত প্রকাশনা চলাকালীন করতে হবে।

আরও বিস্তারিত জানতে অথবা খতিয়ান সংক্রান্ত কোনও সেবা নিতে আমাদের হটলাইন নাম্বারে ফোনকল/ইনবক্স করুন কিংবা হোয়াট্যস্ অ্যাপে যোগাযোগ করুন। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *