হেবা দান

হেবা/দান

হেবা / দান

হেবা শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো অন্যের প্রতি অনুগ্রহ করা। এর সাধারণ অর্থ দান। কোন মূল্য ব্যতীত স্বেচ্ছায় অন্যকে সম্পত্তির মালিক বানিয়ে দেয়াই হচ্ছে হেবা। হেবা সুস্পষ্ট ও সুউচ্চারিত হতে হবে। সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ১২২ ধারা অনুযায়ী স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে কোন ব্যক্তি অপর কোন ব্যক্তির বরাবরে বিনাপণে কোন স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর করাকেই দান হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। 

সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ঐ ধারা অনুযায়ী দান লিখিত, সাক্ষী দ্বারা সমর্থিত এবং রেজিস্ট্রীকৃত হতে হবে। এখানে দখল প্রমাণের বিষয়টি এতটা প্রাধান্য পায় না। কিন্তু সম্পত্তি হস্তান্তর আইন হেবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। দান বা হেবায় তিনটি উপাদান অবশ্যই থাকতে হবে, তাহলো- (১) দাতা কর্তৃক দখল করার প্রস্তাব (২) গ্রহীতা কর্তৃক তা গ্রহণের সম্মতি (৩) দানকৃত সম্পত্তির দখল বুঝে নেওয়া।

হেবানামা/হেবা দলিল 

রেজিস্ট্রেশন আইন-১৯০৮, এর ধারা ৭৮এ (বি) নং অনুসারে যে দলিলের মাধ্যমে ইসলামি শরীয়া মোতাবেক স্বামী-স্ত্রী, পিতা-মাতা ও সন্তান, দাদা-দাদী, নানা-নানী ও নাতি-নাতনি, সহোদর ভাইগণ, সহহোদর বোনগণ এবং সহোদর ভাই ও বোনগণের মধ্যে পণ স্বরূপ কোন অর্থ বা অন্য কোন কিছু গ্রহণ না করে ইতিপূর্বে কোন সুনির্দিষ্ট সময়ে (তারিখ, মাস, বৎসর উল্লেখ করতঃ) ন্যূনতম ২জন সাক্ষীর উপস্থিতিতে প্রদত্ত কোন স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর বা প্রদানের মৌখিক ঘোষণার স্বীকৃতি প্রদান করা হয়, তাকে হেবা ঘোষণাপত্র দলিল বলে। 

পণ স্বরূপ কোন অর্থ বা অন্য কোন কিছু গ্রহণ না করে কোন ব্যক্তি স্বেচ্ছায় গ্রহীতার সম্মতিক্রমে যে দলিলের মাধ্যমে কোন সম্পত্তি হস্তান্তর করেন, তাকে দানপত্র বলে। দানপত্রের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির দখল হস্তান্তর আবশ্যকীয় শর্ত। দান গ্রহণের পূর্বে গ্রহীতার মৃত্যু হলে দানপত্র কার্যকর বা সিদ্ধ হয় না। দানপত্রে কোন প্রতিদান (Consideration) এর কোন ব্যবস্থা নেই; তবে শর্ত আরোপ করা যেতে পারে।

 

হেবা / দান হেবা

প্রকারভেদ

মুসলমানদের মধ্যে দান দুই ধরনের হয়ে থাকে, যথা

(১) হেবা বা সাধারণ দান; 

(২) হেবা-বিল-এওয়াজ বা কোন কিছুর বদলে দান; এবং  

হেবা/সাধারণ দান: সাধারণভাবে হেবা বলতে শর্তবিহীনভাবে ও স্বেচ্ছাপ্রনোদিত হয়ে বিনিময়মূল্য ছাড়া এক ব্যক্তি কতৃক অন্য ব্যক্তিকে কোন সম্পত্তির হস্তান্তর বোঝায়।

হেবা-বিল-এওয়াজ: স্নেহ, ভালোবাসা,মমতা,শ্রদ্ধা ইত্যাদি মানবীয় গুণাবলী একজন মানুষকে হেবা বা দান কায সম্পাদনে উদ্ধুদ্ধ করে। আর যখনই একজন মানুষ অপর একজন মানুষের প্রতি স্নেহ ভালোবাসা আপ্ললিত হয়ে তার স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি বিনা শতে অর্পণ করে তখন স্বভাবতই উক্ত দানগ্রহীতা দাতার মহানুভবতায় বেশী মুগ্ধ হয়ে দাতাকে খুশী করার জন্য কিছু সামর্থানুযায়ী উপঢৌকণ বা উপহার প্রদান করে।মূলত এ প্রত্যয় থেকেই হেবা বিল এওয়াজের উন্মেষ। হেবা বিল এওয়াজ অর্থ হলো কোন কিছু প্রতিদানের বিনিময়ে দান। 

সুতরাং দাতা যদি কোন সম্পত্তি দান করে দানগ্রহীতার কাছ হতে এর বিনিময়ে কিছু গ্রহণ করে, তখন এধরনের দানকে মুসলিম আইন মোতাবেক হেবা-বিল -এওয়াজ নামে অভিহিত করা হয়।

হেবা-বিল-এওয়াজের শাব্দিক অর্থই হলো প্রতিদানের জন্য দান। অর্থাৎ এই প্রকারের দানের ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রতিদান থাকতে হবে। হেবা বা সাধারণ দানের সাথে হেবা-বিল-এওয়াজের পার্থক্য এই যে, হেবা-বিল-এওয়াজ হলো প্রতিদানের জন্য প্রদত্ত একটি দানবিশেষ। বস্তুত এটি এক প্রকারের বিক্রয় এবং এতে বিক্রয়-চুক্তির যাবতীয় শর্ত বিদ্যমান থাকে।

শর্তসমূহ

হেবা করার জন্য তিনটি শর্ত পূরণ করতে হয়। 

  • প্রথমত, হেবাকারীকে হেবার ঘোষণা দিতে হবে অথবা পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বা আমমোক্তারনামা করেও ঘোষণা দিতে পারেন;
  • দ্বিতীয়ত, যাকে হেবা বা দান করা হচ্ছে, তার দ্বারা গ্রহণ; এবং
  • তৃতীয়ত, হেবা করা সম্পত্তির দখল গ্রহণ;

হেবা কিংবা দান করা সম্পত্তির দখল হস্তান্তর করা বাধ্যতামূলক এবং অবশ্যই রেজিস্ট্রি করে নিতে হবে।

এছাড়া উক্ত দানের মধ্যে নিম্নোক্ত উপাদানসমূহ থাকতে হবে: 

  • দাতাকে সুস্থ মস্তিষ্কের সাবালক ব্যক্তি হতে হবে।
  • দাতার জীবনকালের মধ্যে দান কার্য সম্পন্ন হতে হবে।
  • দান গ্রহণের পূর্বে দাতার মৃত্যু হলে দান বাতিল বলে গণ্য হবে।
  • দানের সময় সম্পত্তিতে দাতার মালিকানা ও দখল থাকতে হবে।
  • দান স্বেচ্ছায় এবং পণবিহীন হতে হবে।
  • দান গ্রহীতা মানসিক ভারসাম্যহীন বা নাবালক হরে তার পক্ষে অভিভাবক দান গ্রহণ করতে পারবেন। দান যে কেউ গ্রহণ করতে পারেন।
  • মুসলিম আইন অনুযায়ী দাতা তার সমুদয় সম্পত্তি যে কাউকে দান করতে পারেন। দায়ভাগ মতে একজন হিন্দু যাদের ভরণপোষণে আইনত বাধ্য তাদের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা রাখার পর বাকী সম্পত্তি দান করতে পারেন।
  • রেজিস্ট্রেশন (সংশোধন) আইন ২০০৪ এর ৭৮এ ধারা এবং সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ১২৩ ধারা অনুযায়ী দান লিখিত ও রেজিস্ট্রিকৃত হতে হবে এবং অন্ততঃ দুইজন সাক্ষী দ্বারা উক্ত দলিল সত্যায়িত করতে হবে। অস্থাবর সম্পত্তির দান রেজিষ্ট্রিকৃত দলিল বা সম্পত্তির দখল হস্তান্তরের মাধ্যমে করা যায়।

দাতার মৃত্যুর পর দানপত্র রেজিস্ট্রি করা যায় কিনা

কোন কারণে যদি রেজিস্ট্রি করার আগেই দাতার মৃত্যু হয় তারপরও উক্ত দান রেজিস্ট্রি করা যাবে। তবে দাতা বেঁচে থাকতে দানগ্রহীতা কর্তৃক সম্পত্তিটি গ্রহণ করতে হবে। দান-এর শর্তসমূহ পূরণ করা হলে দাতার মৃত্যুর পরও দানপত্র রেজিস্ট্রি করা যায়।

হেবাকারী ও গ্রহীতা যদি দানকৃত সম্পত্তিতে যৌথভাবে বসবাস করে, তবে দখল কিভাবে হস্তান্তরিত হবে? 

এ ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিক দখল হস্তান্তর সম্ভব নয় এবং প্রয়োজনও নেই। দাতা যদি এমন কোনো কাজ করেন, যা থেকে তাঁর দখল হস্তান্তরের ইচ্ছা প্রকাশিত হয়, তাহলেই দখল হস্তান্তর হয়েছে বলে ধরে নিতে হবে। নামফলক পরিবর্তন, নামজারি, সম্পত্তির বিবরণীতে উল্লেখ করা, আয়কর বিবরণীতে উল্লেখ করা ইত্যাদিভাবে দাতা তাঁর ইচ্ছা প্রকাশ করতে পারেন।

স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে হেবা করার নিয়ম

দাতা ও গ্রহীতা দানকৃত সম্পত্তিতে বসবাস করলে কিভাবে দখল হস্তান্তর বোঝানো হয়, তা আগের অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে। স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে দান করলে একই নিয়মে দখল হস্তান্তর বোঝাতে হবে। যদি সম্পত্তি ভাড়া দেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে ধরে নিতে হবে, দানের পর স্ত্রীর পক্ষে স্বামী ভাড়া আদায় করে থাকবেন। স্বামী যদি অস্থাবর সম্পত্তি অপ্রাপ্ত বয়স্ক স্ত্রীকে রেজিস্টার্ড দলিল মূলে দান করে যে স্ত্রী ভালো মন্দ বুঝতে পারে এরূপ দান বৈধ।   

হেবাকৃত সম্পত্তি ভাড়াটিয়ার দখলে থাকলে কীভাবে তার দখল হস্তান্তরিত হবে?

এ ক্ষেত্রে দাতা যদি ভাড়াটিয়াকে সম্পত্তির ভাড়া গ্রহীতা বরাবর প্রদানের অনুরোধ করে বা জমির মালিকানাসংক্রান্ত কাগজপত্র গ্রহীতাকে দিয়ে দেয়, অথবা গ্রহীতা বরাবর নামজারি করা হয়। তবে দখল হস্তান্তরিত হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে।      

অজাত ব্যক্তি বরাবরে দান 

অজাত ব্যক্তি বরাবরে দান করলে দানের তারিখ হতে ৬ মাসের মধ্যে সে জন্ম গ্রহণ কররে সে দান বৈধ হবে। নাবালকের পক্ষে তার অভিভাবকের কাছে দখল হস্তান্তরিত হলে দান সম্পন্ন হবে। নাবালকের সম্পত্তির অভিভাবক হচ্ছে তার বাবা। বাবার অবর্তমানে বাবা কর্তৃক নিয়োজিত ব্যক্তি, তাদের অবর্তমানে দাদা বা দাদা কর্তৃক নিয়োজিত ব্যক্তি।

মৃত্যুর সম্ভাবনাকালে দান 

মৃত্যুশয্যাকালীন দান উইলের ন্যায় কার্যকরী হবে অর্থাৎ ঐ দান অনাত্মীয়ের অনুকূলে করা যাবে কিন্তু মোট সম্পত্তির ১/৩ ভাগের বেশী দান করা যাবে না। তবে উত্তরাধিকারীগণের সম্মতি থাকলে অনাত্মীয়কে ১/৩ ভাগের অধিক সম্পত্তি দান করা যাবে। এ অবস্থায় কোন উত্তরাধিকারীকে দান করা যাবে না।

হিন্দুখ্রিস্টান/অমুসলিম আইনে দান

দানের ঘোষণা দলিলের মাধ্যমে হিন্দু, খ্রিষ্টান ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীগনের আপন ভাই-বোন, পিতা/মাতা-ছেলে/মেয়ে, স্বামী-স্ত্রী, দাদা/দাদী-নাতী/নাতনী, নানা/নানী-নাতী/নাতনী এই কয়েকটি সম্পর্কের মধ্যে সম্পত্তি হস্তান্তর করা যায় {রেজিস্ট্রেশন আইন-১৯০৮, এর ধারা ৭৮এ (বিবি) নং অনুসারে}।

হেবাওয়াক্অসিয়ত/উইল

উইল বা অসিয়ত হলো আরবি শব্দ। উইল (testament) বা অসিয়ত হলো ভবিষ্যৎ দান। কোন ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি বা সম্পত্তির মুনাফা কিভাবে বিলি-বন্টন করা হবে তা তার মৃত্যুর পূর্বেই লিখিত বা মৌখিকভাবে নির্ধারণ করে যাওয়ার আইন সম্মত ঘোষণাই হলো উইল বা অসিয়ত। 

সুস্থ ও প্রাপ্তবয়স্ক কোনো মুসলমান তাঁর অনাত্মীয়কে অর্থাৎ যিনি তাঁর সম্পত্তির উত্তরাধিকার হবেন না, তাঁকে সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত অসিয়ত করতে পারেন। কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর পর তাঁর সম্পত্তির ওপর বেশ কয়েকটি দায় থাকে। ওই ব্যক্তির দাফন-কাফনের ব্যয়, সাকসেশন সার্টিফিকেট বা এ সম্পর্কিত আইনের ব্যয়, মৃত্যুশয্যাকালীন ব্যয়, মৃত্যুর তিন মাস আগ পর্যন্ত সেবার ব্যয় এবং সব ঋণ তাঁর সম্পত্তি থেকে মেটাতে হবে। এরপর যে সম্পত্তি থাকবে, তার এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত অসিয়ত করা যায়। অসিয়ত মৌখিক বা লিখিত করা যেতে পারে। এক-তৃতীয়াংশের বেশি এবং উত্তরাধিকারীকে অসিয়ত করা হলে তার পরিণতি এক-তৃতীয়াংশের বেশি অসিয়ত করা হলে বা 

উত্তরাধিকারীকে অসিয়ত করা হলে, তার জন্য ওয়ারিশের সম্মতি প্রয়োজন হবে। কোনো ওয়ারিশের অসম্মতিতে তার অংশ হারাহারিভাবে বাতিল হবে। দান সঙ্গে সঙ্গে হস্তান্তর করতে হয়। উইল কার্যকর হয় মৃত্যুর পর। তবে নাবালক সন্তান থাকলে দানের ক্ষেত্রে সন্তান সাবালক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হস্তান্তর করতে হবে।  

একজন হিন্দু ব্যক্তিও তাঁর সম্পত্তি উইল করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে কোনো সুনির্দিষ্ট নিয়ম নেই। একজন হিন্দু ব্যক্তি তাঁর সমুদয় সম্পত্তি উইল করতে পারেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে জেলা জজ আদালত থেকে উইলকারীর মৃত্যুর পর উইল প্রবেট করতে হয়। প্রবেট হচ্ছে আদালতের মাধ্যমে উইলের প্রমাণ।

ওয়াক্ফও আরবি শব্দ, এর অর্থ ব্যক্তিগত মালিকানা থেকে মুক্ত কোনো সম্পত্তি নিরাপদে হেফাজত করা। আরবে ইসলামি রাষ্ট্র গঠনের শুরু থেকেই ওয়াক্ফ ব্যবস্থা স্বীকৃত। ওয়াক্ফ শব্দটির আক্ষরিক অর্থ চুক্তি বা উৎসর্গ। ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে ভারতের মুসলমান ওয়াক্ফ বৈধকরণ আইনে প্রদত্ত সংজ্ঞা অনুযায়ী ওয়াক্ফ অর্থ কোনো মুসলমান কর্তৃক তার সম্পত্তির কোনো অংশ এমন কাজের জন্য স্থায়িভাবে দান করা যা মুসলিম আইনে ‘ধর্মীয়, পবিত্র বা সেবামূলক’ হিসেবে স্বীকৃত। রোমান আইনে ‘সম্পত্তি অর্পণ’ এবং হিন্দু আইনে ‘দান’ ওয়াক্ফ-এর সমতুল্য। ধর্মীয়, শিক্ষাসংক্রান্ত অন্যকোনো জনহিতকর কাজের উদ্দেশ্যে কতিপয় শর্তসাপেক্ষে ব্যক্তিগত সম্পত্তি ওয়াক্ফরূপে দান করা যায়। 

একটি বৈধ ওয়াক্ফের ক্ষেত্রে এর শর্তাবলি সাধারণত এরকম হয়ে থাকে: ১. এটি একটি স্থায়ী ব্যবস্থা, অর্থাৎ কোনো নির্দিষ্ট সময়কালের জন্য ওয়াক্ফ করা যায় না; ২. এটি তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হয়, একে স্থগিত বা মুলতবি করা যায় না; ৩. এটি একটি অপ্রত্যাহারযোগ্য আইনগত চুক্তি এবং ৪. ওয়াক্ফ সম্পত্তি কখনও বাজেয়াপ্ত করা যায় না।

হেবা বাতিল: দান করা সম্পত্তি কি ফেরত নেয়া যায়

একবার স্বেচ্ছায় দান করার পর তা প্রত্যাহার করা আইনে খুব শক্ত। মুসলিম আইনের ১৬৭ ধারায় (ডি এফ মোল্লা) দান বাতিল সম্পর্কে বলা হয়েছে। ওই ধারার ১ উপধারা অনুসারে, দখল প্রদানের আগে যে কোনো সময়ে দাতা কর্তৃক হেবা বাতিল করা যেতে পারে। কারণ দখল প্রদানের আগে দান আদৌ সম্পূর্ণ হয় না। সুতরাং দান বা হেবা বাতিল করতে হলে সেটি দখল অর্পণের আগেই করতে হবে। ২ উপধারায় বলা হয়েছে, দখল অর্পণের পরও প্রদত্ত দান কিছু ক্ষেত্রে বাতিল করা যেতে পারে। দখল হস্তান্তরের পরে দান প্রত্যাহারের জন্য আদালতের ডিক্রি লাগবে। দান গ্রহণের পূবেই গ্রহীতা মারা গেলে দান বাতিল হয়ে যাবে। 

দাতা কর্তৃক প্রদত্ত কোনো দান বাতিল করা যেতে পারে কিন্তু তার মৃত্যুর পর তার উত্তরাধিকারীরা ওই দান বাতিল করতে পারবে না। হিন্দু আইনের দান একবার আইনত সম্পন্ন হয়ে গেলে তা আর বাতিল করা যায় না। তবে দান গ্রহীতা যদি প্রতারণা করে কিংবা অবৈধ প্রতিপত্তির মাধ্যমে দানের দলিল অর্জন করে, যদি পাওনাদারকে ঠকানোর উদ্দেশে দান করা হয়, সে ক্ষেত্রে ওই দান বাতিল বা বাতিলযোগ্য বলে গণ্য হবে।

অবাতিলযোগ্য হেবা

নিম্নলিখিত ক্ষেত্রগুলো বিদ্যমান থাকলে হেবা দলিল বাতিল করা যায় না (আদালতের ডিক্রি ছাড়া):

(ক) হেবাকৃত সম্পত্তির দাতা-গ্রহীতা স্বামী বা স্ত্রী হলে;

(খ) গ্রহীতা মৃত্যূবরণ করলে;

(গ) দাতা-গ্রহীতার মধ্যে বিবাহ অযোগ্য সম্পর্ক বিদ্যমান থাকলে;

(ঘ) হেবাকৃত সম্পত্তি গ্রতীতা কর্তৃক বিক্রি বা হস্তান্তরিত হয়ে গেলে;

(ঙ) হেবাকৃত সম্পত্তি বিলীন বা ধ্বংস হয়ে গেলে;

(চ) হেবাকৃত সম্পত্তির মূল্য বেড়ে গেলে;

(ছ) হেবাকৃত সম্পত্তির প্রকৃতি সম্পূর্ণ পরিবর্তন হয়ে গেলে;

(জ) হেবাটি ‘হেবা বিল এওয়াজ’ (বিনিময়ে দান) হয়ে থাকলে হেবা দলিল বাতিল করা যায় না।