প্রাইভেট কোম্পানি নিবন্ধন
একক ব্যক্তি কোম্পানি নিবন্ধন: উন্নত দেশগুলোতে থাকলেও দেশে এত দিন এক ব্যক্তির কোম্পানি করার সুযোগ ছিল না। কোম্পানি আইন সংশোধন করে সুযোগটি দিয়েছে সরকার। ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইন সংশোধন করে গত ২৬ নভেম্বর ২০২০ সালে ‘কোম্পানি (দ্বিতীয় সংশোধন) আইন, ২০২০’–এর গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে।
- এক ব্যক্তির কোম্পানি বা ওপিসির পরিশোধিত মূলধন হবে ২৫ লাখ থেকে ৫ কোটি টাকা।
- কোম্পানির ধরন অনুযায়ী নামের শেষে লিমিটেড, পিএলসি ও ওপিসি উল্লেখ করতে হবে।
এক ব্যক্তির কোম্পানি হল সেই কোম্পানি, যার বোর্ডে সদস্য থাকবেন কেবল একজন। সংশোধিত কোম্পানি আইন, ১৯৯৪ এর ধারা ২ এর ১(খ) মতে, এক ব্যক্তি কোম্পানি বলতে এমন একটি কোম্পানিকে বুঝাবে যার শেয়ার হোল্ডার শুধুমাত্র একজন প্রাকৃতিক সত্ত্বাবিশিষ্ট ব্যক্তি বা Natural Person। একমাত্র পরিচালক মারা গেলে সব শেয়ারের মালিক হবেন তার মনোনীত ব্যক্তি। পরিচালক ও প্রধান ব্যক্তি একজন থাকেন বলে এ ধরনের কোম্পানির পর্ষদ সভা করা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় নিয়মের ছাড় পাবে।
বিলে বলা হয়েছে, এক ব্যক্তি কোম্পানির পরিশোধিত শেয়ার মূলধন হবে অন্যূন ২৫ লাখ টাকা এবং অনধিক ৫ কোটি টাকা। পরিশোধিত শেয়ার মূলধন এবং বার্ষিক টার্নওভারেএর বেশি হলে শর্তপূরণ সাপেক্ষে এক ব্যক্তির কোম্পানিকে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি বা ক্ষেত্রমত পারলিক লিমিটেড কোম্পানিকে রূপান্তর করা যাবে।
ধারা ১১ক(গ) অনুসারে এইরূপ সীমিতদায় এক ব্যক্তি কোম্পানির ক্ষেত্রে কোম্পানির নামের শেষে “এক ব্যক্তি কোম্পানি বা One Person Company বা OPC” শব্দসমূহ লিখতে হবে। কিন্তু শর্ত থাকে যে, ধারা ২৮ এর অধীন মুনাফা ব্যতীত ভিন্ন উদ্দেশ্য বিশিষ্ট সমিতি এবং ধারা ২৯ এর অধীন গ্যারান্টি দ্বারা সীমিতদায় কোম্পানির ক্ষেত্রে কোম্পানির নামের শেষে ”এক ব্যক্তি কোম্পানি বা One Person Company বা OPC” শব্দসমূহ লিখতে হবে না।
যার ফলে এখন থেকে আর শুধু আইন রক্ষার্থে বা নিয়ম রক্ষার্থে কাউকে কোম্পানির শেয়ার হোল্ডার বানানোর প্রয়োজন নেই। আপনি চাইলে নিজে নিজেই এক ব্যক্তি বিশিষ্ট কোম্পানি নিবন্ধন করে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন। এবার আসুন আমরা আলোচনা করি এক ব্যক্তি বিশিষ্ট কোম্পানি নিবন্ধন করতে গেলে আপনার কী কী প্রয়োজন (প্রয়োজনের তালিকাটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির মতোই):
- জাতীয় পরিচয়পত্র/ভোটার আইডি কার্ড
- পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- মোবাইল নাম্বার
- ই-মেইল অ্যাড্রেস
- টিন (TIN) সার্টিফিকেট
- সিগনেচার
এক ব্যক্তি বিশিষ্ট কোম্পানি নিবন্ধনে আপনার যে যে যোগ্যতার প্রয়োজন ঠিক তেমনি নমিনিরও একই ধরনের যোগ্যতা প্রয়োজন। কেননা আপনার অবর্তমানে তাঁকে কোম্পানি পরিচালনার দায়িত্ব নিতে হবে সেক্ষেত্রে নমিনিরও জাতীয় পরিচয়পত্র, ছবি, মোবাইল নাম্বার, ইমেইল, টিন, সিগনেচার ইত্যাদি সংযুক্ত করতে হবে। তবে আপনি চাইলে আপনার নমিনি যেকোনো মুহূর্তে পরিবর্তন করতে পারবেন, যেমনটা ব্যাংকের নমিনি পরিবর্তন করা যায়। আবার একইভাবে নমিনি নিজেও আপনার সাথে কথাবার্তা বলার মাধ্যমে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিতে পারেন।
এক ব্যক্তি বিশিষ্ট কোম্পানি নিবন্ধন করার সময় আপনার কোন প্রকারের ট্রেড লাইসেন্সের প্রয়োজন হবে না বরং আপনার কোম্পানি নিবন্ধন হয়ে যাওয়ার পরে কোম্পানির নামে ট্রেড লাইসেন্স করতে পারবেন। এই ক্ষেত্রে আপনি একটি কোম্পানি দিয়েই অনেকগুলো কাজ করতে পারবেন। অনেকের ধারণা থাকে যে আমাকে ভিন্ন ভিন্ন কাজের জন্য ভিন্ন ভিন্ন কোম্পানি করতে হবে কিনা। আপনি একটি এক ব্যক্তি বিশিষ্ট কোম্পানির মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন। পাশাপাশি একজন এক ব্যক্তি বিশিষ্ট কোম্পানির মালিক থাকা অবস্থায় আপনি চাইলে অন্যান্য প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি বা পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার হতে পারবেন, তাতে কোনো বাঁধা নেই। কিন্তু একজন ব্যক্তির শুধুমাত্র একটি এক ব্যক্তি বিশিষ্ট কোম্পানির মালিকানা থাকতে পারবে, কেউ একসাথে একাধিক এক ব্যক্তি বিশিষ্ট কোম্পানির মালিক হতে পারবেন না।