নামজারি

নামজারি (Mutation)

নামজারি

কেউ যখন জমি ক্রয় করে, জমির খতিয়ান কিন্তু পূর্বের মালিকের নামেই রয়ে যায়। তাই সমস্যাটা সমাধান করার জন্য জমি ক্রয় করার পর যত দ্রুতসম্ভব জমি নিজের নামে খতিয়ান করে নিতে হবে। কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোন বৈধ পন্থায় ভূমি/জমির মালিকানা অর্জন করলে সরকারি রেকর্ড সংশোধন করে তার নামে রেকর্ড হালনাগাদ করাকেই নামজারি বলা হয়।

কোন ব্যক্তির নামজারি সম্পন্ন হলে তাকে একটি খতিয়ান দেয়া হয় যেখানে তার অর্জিত জমির একখানি সংক্ষিপ্ত হিসাব বিবরণী উল্লেখ থাকে। উক্ত হিসাব বিবরণী অর্থাৎ খতিয়ানে মালিকের নাম, পূর্বের জমির মালিকের নাম, কোন্ মৌজা, মৌজার নম্বর (জে এল নম্বর), জরিপের দাগ নম্বর, দাগে জমির পরিমান, জমির শ্রেণি, একাধিক মালিক হলে তাদের নির্ধারিত হিস্যা ও প্রতি বছরের ধার্যকৃত খাজনা (ভূমি উন্নয়ন কর) ইত্যাদি লিপিবদ্ধ থাকে। 


দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে জরিপের মাধ্যমে রেকর্ড সংশোধন প্রক্রিয়া পরিচালিত হয় বলে দুই জরিপের মধ্যবর্তী সময়ে উত্তরাধিকার কিংবা দলিলের মাধ্যমে জমি হস্তান্তরের ফলে ভূমি মালিকানার পরিবর্তন বা খতিয়ান হালনাগাদ করার জন্য রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্র্জাস্বত্ব আইন ১৯৫০ এর ১৪৩ ধারায় কালেক্টরকে ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়েল ১ঌঌ০ এর ২০ অনুচ্ছেদ বলে কালেক্টরের এ ক্ষমতা মাঠ পর্যায়ে বর্তমানে সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রয়োগ করে থাকেন যা পূর্বে উপজেলা রাজস্ব অফিসার বা সার্কেল অফিসার (রাজস্ব) পালন করতেন। সুতরাং অন্তবর্তীকালীন রেকর্ড পরিবর্তন, সংশোধন ও হালকরণের প্রক্রিয়াকে নামজারি (mutation) বা জমাখারিজ নামে আখ্যায়িত করা হয়।

নামজারি কী

জমাখারিজ কী?

জমাখারিজ প্রজাস্বত্ব আইনের ১১৭ ধারা অনুসারে হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে খতিয়ানে একাধিক মালিকানা ভেঙ্গে একক নামে খতিয়ান খোলা হয়। একটি খতিয়ান থেকে কোন মালিকের নাম বাদ দেওয়াকেই জমাখারিজ বলে। নামজারি সময়ে জমির সাবেক মালিকের নাম পরিবর্তন করাকেও জমাখারিজ বলা হয়। অর্থাৎ জমা হতে কারও নাম কর্তন করা বা বাদ দেওয়া এক কথায় নাম খারিজ করে ফেলাই হলো জমাখারিজ।

জমাএকত্রিকরণ কী?

একই মৌজায় আপনার অনেকগুলো খতিয়ানে জমি একক কিংবা যৌথ নামে থাকতে পারে। এই ভিন্ন ভিন্ন খতিয়ানের জমি-খন্ডগুলো একটি মাত্র খতিয়ানভুক্ত করে রেকর্ড সংশোধন বা হালনাগাদকরণ করাকে জমাএকত্রিকরণ বলে। প্রজাস্বত্ব আইনের ১১৬ ধারা মতে খতিয়ানের জমাএকত্রিকরণ করা হয়ে থাকে।

নামজারি -জমাখারিজ এবং জমাএকত্রিকরণ কী?

নামজারি, জমাখারিজ এবং জমাএকত্রিকরণ সংজ্ঞাগুলো আলোচনা করলে দেখা যায়, নামজারি হচ্ছে সরকারি রেকর্ড এ জমির মালিক হিসাবে কারো নাম ঘোষণা বা নাম জারি করা, জমাখারিজ হলো জোত হতে জমি কর্তন কিংবা ভিন্ন হোল্ডিং এ স্থানান্তর করা। অন্যদিকে জমাএকত্রিকরণ হচ্ছে একই মালিকের একই মৌজায় ভিন্ন ভিন্ন খতিয়ানে জমি এক খতিয়ানে এক হোল্ডিং-এ অন্তর্ভুক্ত করা।

নামজারি করা জরুরি কেন?

কেন নামজারি এত জরুরি তার মধ্যে নিম্নলিখিত কারণগুলো গুরুত্বপূর্ণ:

১। শুধুমাত্র কোন দলিলের মাধ্যমে অর্জিত মালিকানার ভিত্তিতে অথবা ওয়ারিশ হিসেবে পিতা-মাতার জমিতে দখলসূত্রে থাকলেই সরকারি রেকর্ডে উক্ত ভূমিতে তাঁর মালিকানা নিশ্চিত হয় না। কোন ভূমিতে বৈধ ওয়ারিশ বা ক্রয়সূত্রে মালিক হবার পর পূর্বের মালিকের নাম হতে নাম কেটে বর্তমান মালিকের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে হয়, তাহলেই তার মালিকানা সরকার কর্তৃক নিশ্চিত হয়। আর এটিই হল নামজারি পদ্ধতি।

২। আপনি যদি ওয়ারিশ হিসাবে বা ক্রয়সূত্রে কোন জমির মালিক হন কিন্তু নামজারি না করান, তবে আপনার অজান্তে কোনভাবে এক/একাধিক দলিল সম্পাদন করে কোন স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি আপনার আগে নামজারি করে ফেলতে পারে। তাতে আপনি পরবর্তীতে নামজারি করতে গেলে স্বাভাবিকভাবেই সমস্যায় পড়বেন। বাস্তবক্ষেত্রে জটিলতা আরো বাড়তে দেখা গেছে যখন উক্ত স্বার্থানেষী ব্যক্তি অপর এক বা একাধিক ব্যক্তির নিকট ঐ জমি ইতোমধ্যে বিক্রয় করে ফেলেছে। বর্তমানে এরকম ঘটনা অহরহ ঘটছে। এসব ক্ষেত্রে নানারকম মামলা মোকদ্দমার সৃষ্টি হয়ে থাকে যা দীর্ঘদিন যাবৎ অর্থ, সময় ও মানুষে-মানুষে সম্পর্কের অবনতি ঘটায়।

৩। সাধারণভাবে আমাদের ধারণা, দলিল সম্পাদন হলেই কাজ শেষ। নামজারির দরকার কী? এটি অত্যন্ত ভুল ধারণা। দলিল সম্পাদনের মাধ্যমে শুধুমাত্র মালিকানার হস্তান্তর হয়, সরকারের খাতায় মালিক হিসাবে স্বীকৃতি পাওয়া যায় না।

৪। রেজিস্ট্রেশন দপ্তরটি আইন মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি অফিস। সকল প্রকার দলিল সম্পাদন, রেজিস্ট্রিকরণ উক্ত দপ্তরের কাজ। দলিল রেজিস্ট্রিকরণের ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত যিনি বিক্রেতা তিনি আদৌ উক্ত জমির মালিক হিসাবে সরকারের রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত আছেন কী না তার কোন রেকর্ড জেলা রেজিস্টার বা সাব-রেজিস্টারের দপ্তরে নেই। ফলে ভুলবশত: একই জমির এক বা একাধিক দলিলের মাধ্যমে বিক্রয়ের ঘটনা ঘটে। অপরদিকে ভূমি অফিসগুলি ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন যার কাছে সরকারের কাছে রেকর্ডভুক্ত মালিকদের নাম, পূর্ববর্তী নামজারিকৃত মালিকদের নাম, নথিসহ বিস্তর তথ্য থাকে। ফলে একবার নামজারি করাতে সক্ষম হলে একই জমির একাধিকবার বিক্রয় হলেও মূল মালিকের আর ক্ষতিগ্রস্ত বা হয়রানি হবার সম্ভাবনা কম থাকে।

৫। নামজারি আবেদনের মাধ্যমে আবেদনকারি যে স্বত্বলিপি অর্জন করেন, যাকে প্রচলিত ভাষায় আমরা ‘খতিয়ান’ বলে থাকি, এর মাধ্যমে তার উক্ত জমিতে মালিকানা স্বত্ব প্রমাণে নিশ্চয়তা লাভ করেন যা অন্য কোন দালিলিক মাধ্যমে লাভ করেন না।

৬। নামজারি করা না থাকলে শুধু একাধিক বিক্রয়ের আশঙ্কাই বিদ্যামান থাকে না, পরবর্তীতে আপনার অর্জিত সম্পত্তিতে দখলে থাকলেও পরবর্তীতে আপনার অবর্তমানে আপনার উত্তরাধিকারগণ উক্ত সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবার আশঙ্কা থাকে।

৭। যে কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ঋণ নিতে গেলে জমি বন্ধকের ক্ষেত্রে খতিয়ান ছাড়া আবেদন গ্রহণ করা হয় না।

৮। ওয়ারিশনমূলে প্রাপ্ত জমির মালিকরা যদি নামজারি না করান তাহলে তাদের মধ্যে বিশেষত: নারী অংশীদারগণ এবং ভবিষ্যতে তাদের ওয়ারিশগণদের মধ্যে মারাত্নক জটিলতা সৃষ্টি হয়। এ জন্য ওয়ারিশগণ সমঝোতার মাধ্যমে প্রথমেই নামজারি সম্পন্ন করে রাখলে পরবর্তীতে অনেক জটিলতা পরিহার করা সম্ভব হয়।

নামজারি করা কখন প্রয়োজন হয়

১। মূল ভূমি মালিকের মৃত্যুতে উত্তরাধিকারগণের নামে খতিয়ান সৃষ্টির জন্য। ভূমি মালিকের মৃত্যুর কারণে উত্তরাধিকারদের নাম সরকারি রেকর্ডে রেকর্ডভুক্ত করতে হয়।

উত্তরাধিকারীদের ক্ষেত্রে ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল ১৯৯০-এর ৩২১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই করে নামজারির আদেশ দেবেন। এ ক্ষেত্রে নতুন কোনো হোল্ডিং না খুলে মৃত ব্যক্তির নাম কর্তন করে, ফারায়েজ অনুযায়ী হিস্যা/জমির ভাগ বণ্টন করে উত্তরাধিকারীদের নাম আগের হোল্ডিংয়ের জায়গায় হোল্ডিংভুক্ত করা হয়।

২। রেজিস্ট্রি দলিলমূলে জমি হস্তান্তরের কারণে ক্রেতা বা গ্রহিতার নামে খতিয়ান সৃষ্টির জন্য। জমি বিক্রি, দান, হেবা, ওয়াকফ, অধিগ্রহণ, নিলাম ক্রম, বন্দোবস্ত ইত্যাদি সূত্রে হস্তান্তর হলে নতুন ভূমি মালিকের নামে রেকর্ডভুক্ত করতে হয়।    

৩। ভূমি উন্নয়ন করের বকেয়া বাবদ নিলাম খরিদের জন্য।

৪। স্বত্ব মামলার রায়/ডিক্রির কারণে। দেওয়ানি বা সিভিল কোর্টের রায় বা ডিক্রিমূলে মালিকানা লাভ করলে সে রায় মোতাবেক নামজারির আবেদন করা যায়।

৫। জমি অধিগ্রহণের কারণে।

৬। খাস খতিয়ানভুক্ত করণের ফলে।

৭। সরকার কর্তৃক ক্রয়কৃত বা অন্য কোন খাস জমি বন্দোবস্তের কারণে।

৮। পরিত্যাক্ত বা নদী সিকস্তির কারণে ভূমি উন্নয়ন কর মওকুফের কারণে।

৯। নদী পয়স্তিজনিত কারনে রেকর্ড সংশোধনের জন্য।

নামজারি আবেদনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

প্রথমেই জেনে রাখা প্রয়োজন, একটি পূর্ণাঙ্গ নামজারি আবেদনের জন্য আপনার নিচের কাগজপত্রগুলো থাকতে হবে :

১। মূল আবেদন ফরম (এটি বাধ্যতামূলক)

২। এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি (একাধিক ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রত্যেকের জন্যও প্রযোজ্য) (বাধ্যতামূলক)

৩। সর্বশেষ খতিয়ান (যাঁর কাছ থেকে জমি ক্রয় করেছেন বা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন তাঁর খতিয়ান) (এটি বাধ্যতামূলক)

০৪। ২০ টাকা মূল্যের কোর্ট ফি (বাধ্যতামূলক)

৫। ওয়ারিশসূত্রে মালিকানা লাভ করলে অনধিক তিন মাসের মধ্যে ইস্যু করা মূল ওয়ারিশান সনদ (ম্যাজিস্ট্রেট/প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা/ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান/সংসদ সদস্যের মতো জনপ্রতিনিধি কর্তৃক প্রদত্ত সাকশেসন সার্টিফিকেট) প্রদান করতে হবে। (শুধুমাত্র ওয়ারিশদের জন্য বাধ্যতামূলক)

রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ১৪৩ (বি) ধারা মোতাবেক কোনো রেকর্ডীয় মালিক মৃত্যুবরণ করলে তার ওয়ারিশরা নিজেদের মধ্যে একটি বণ্টননামা সম্পাদন করে রেজিস্ট্রি করবেন। উক্ত রেজিস্টার্ড বণ্টননামাসহ নামজারির জন্য আবেদন জানাবেন।

৬। জাতীয় পরিচয়পত্র/পাসপোর্ট/জাতীয়তা সনদ (ওয়ার্ড কাউন্সিলর কর্তৃক ইস্যু করা) (বাধ্যতামূলক)

৭। ক্রয়সূত্রে মালিক হলে দলিলের সার্টিফায়েড/ফটোকপি (ক্রয়সূত্রে মালিক হলে বাধ্যতামূলক)

৮। বায়া/পিট দলিলের ফটোকপি (একাধিকবার উক্ত জমি ক্রয়-বিক্রয় হয়ে থাকলে সর্বশেষ যার নামে খতিয়ান হয়েছে তার পর থেকে সকল দলিলের কপি প্রয়োজন হবে, অর্থাৎ বাধ্যতামূলক)

৯। চলতি বঙ্গাব্দ (বাংলা সনের) ধার্য করা ভূমি উন্নয়ন কর (এলডি ট্যাক্স) বা খাজনার রশিদ (বাধ্যতামূলক)

১০। আদালতের রায়ের ডিক্রির মাধ্যমে জমির মালিকানা লাভ করলে উক্ত রায়ের সার্টিফায়েড/ফটোকপি (বাধ্যতামূলক)

নামজারিনামজারি/জমাখারিজ/জমাএকত্রিকরণ-এর আবেদনপত্র

কোথায় করা হয় নামজারি

প্রথমে নামজারির আবেদন অনলাইনে করতে হয়। তারপর হার্ডকপি প্রিন্ট করে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি)-এর অফিসে নামজারির জন্য জমা দিতে হয়। সহকারি কমিশনার (ভূমি) অফিসে নামজারি সহকারি পদের একজন দায়িত্বে থাকেন। নাজির পদের একজন নামজারির জন্য ফি জমা নেন। ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তাগণ (তহশিলদারেরা) নামজারির তদন্তের দায়িত্বে থাকেন। অনেকে বিভ্রান্ত হয়ে তহশিলদারের অফিসে নামজারি আবেদন করে থাকেন। এটা ঠিক নয়।

নামজারির ধরণ

১। হস্তান্তর দলিল (এল.টি নোটিশ) মূলে নামজারি

২। সার্টিফিকেট মূলে নামজারি

৩। অধিগ্রহণের মোকদ্দমার ভিত্তিতে নামজারি

৪। আদালতের ডিক্রি মূলে নামজারি

৫। উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তির নামজারি

৬। আবেদনের ভিত্তিতে নামজারি

নামজারির প্রকারভেদ

মিউটেশন বা নামজারি মূলত তিন প্রকারের হয়ে থাকে। যথা-

১। শুধু নামজারি বা নামপত্তন: কোন রেকর্ডিয় মালিকের নামের পরিবর্তে ঐ একই খতিয়ানে পরবর্তী গ্রহীতা ও ওয়ারিশগণের নামভূক্ত হলে, তা শুধু নামজারি বা নামপত্তন হিসেবে পরিচিত। রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ১৪৩ ধারা মতে এ ধরনের নামজারি বা নামপত্তন করা হয়।

২। নাম পত্তন ও জমাখারিজ: কোন দাগের জমি বিক্রয় বা অন্য কোন প্রকার হস্তান্তরের মাধ্যমে বিভক্ত হলে এবং ঐ বিভক্তির জন্য পৃথক হিসাব বা হোল্ডিং খুলে ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের আদেশ প্রাপ্ত হলে তা নামপত্তন ও জমা খারিজ নামে পরিচিত। এক্ষেত্রে জমির মালিকানার পরিবর্তন হবে এবং পৃথক খতিয়ান এবং হোল্ডিং নম্বর পড়বে। রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ১৪৩ ও ১১৭ ধারা মতে নামপত্তন ও জমা খারিজ প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়।

৩। নাম পত্তন ও জমাখারিজ একত্রিকরণ: কোন ব্যক্তির একই মৌজার ভিন্ন ভিন্ন খতিয়ানে জমি থাকলে, উক্ত খতিয়ানগুলোর মাধ্যমে প্রাপ্ত জমি একই খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করে নতুন খতিয়ান প্রস্তুত করলে, তাকে নামপত্তন ও জমা একত্রীকরণ বলে। রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ১৪৩ ও ১১৬ ধারা অনুসারে এ প্রক্রিয়া সম্পদিত হয়।

নামজারি আবেদনের পদ্ধতি

১। আবেদন ফরমের সকল তথ্য যথাযথভাবে পূরণ করবেন। বিএস খতিয়ান নম্বর বা বিএস দাগ নম্বর জানা না থাকলে আপনার সঙ্গে যে খতিয়ানের ওপরে লেখা আছে তা দেখে পূরণ করুন। আবেদন পূরণ হয়ে গেলে নিচে আপনার স্বাক্ষর এবং অবশ্যই আবেদনকারীর প্রকৃত মোবাইল নম্বর (যেখানে পরবর্তীতে আপনার মেসেজ যাবে) তা উল্লেখ করুন। এবার আপনার পাসপোর্ট সাইজের ছবিটি আবেদনপত্রের ওপর সংযুক্ত করুন এবং অন্য সকল কাগজপত্র একত্রে সংযুক্ত করে হেল্পডেস্ক বা সেবাকেন্দ্রে জমা দিন। সেখানে আপনাকে একটি রসিদ দেওয়া হবে এবং পরবর্তী তারিখগুলো জানিয়ে দেওয়া হবে।

২। ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা (ভূসক)-এর কাছে আপনার আবেদন পাঠানোর ২০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন এসি ল্যান্ড অফিসে দাখিলের সময়সীমা নির্ধারণ করবেন। এর মধ্যে আপনি/আপনার উপযুক্ত প্রতিনিধিকে আপনার আবেদনে যেসব কাগজপত্র দাখিল করেছিলেন, তার মূলকপি ভূসকের কাছে প্রদর্শনের জন্য এবং বকেয়া ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের জন্য যেতে হবে। ভূমি উন্নয়ন কর বকেয়া থাকলে বর্তমানে কোনো নামজারি করা হয় না।

৩। ভূসক (তহশিলদার) আপনার সকল কাগজপত্র যাচাইয়ের পর তিনি একটি প্রতিবেদনসহ এসি ল্যান্ড অফিসে পাঠাবেন। এ পর্যায়ে SMS-এর মাধ্যমে আপনাকে জানানো হবে কখন আপনার আবেদন এসি ল্যান্ড অফিসে পৌঁছেছে। এ পর্যায়ে আপনাকে আবেদন প্রাথমিকভাবে যথার্থ পাওয়া গেলে অন্যান্য সংশ্লিষ্ট পক্ষদেরকে নিয়ে শুনানির জন্য একটি তারিখ নির্ধারণ করা হয়। শুনানির দিন কোনো আপত্তি না পাওয়া গেলে সর্বশেষে তা এসি ল্যান্ডের কাছে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয়। ভূসকের কাছ থেকে এসি ল্যান্ড অফিসে নামজারির নথি আসার পর সর্বোচ্চ ২০ কার্যদিবসের মধ্যে আপনার আবেদন অনুমোদন (যথার্থ থাকলে)/খারিজ (যৌক্তিক কারণে) হবে যা আপনাকে SMS-এর মাধ্যমে জানানো হবে।

৪। আপনার নামজারির আবেদন চূড়ান্ত অনুমোদনের পর খতিয়ান প্রস্তুতের জন্য দুদিন সময় লাগে। কারণ এ পর্যায়ে রেকর্ড হতে অনুমোদিত হিসাব অনুযায়ী জমি কর্তন করা হয় এবং প্রস্তুতকৃত খতিয়ান স্বাক্ষর করার জন্য উপস্থাপন করা হয়। এই পর্যায়ে আপনাকে এসি ল্যান্ড অফিসে যোগাযোগ করে ডিসিআর (ডুপ্লিকেট কার্বন রসিদ) বা সহজ কথায় নামজারি ফি বাবদ ২৪৫ টাকা পরিশোধ করে খতিয়ান সংগ্রহ করতে হবে।

নামজারি সেবা প্রাপ্তির সময়সীমা

বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী মহানগরে ৬০ কর্মদিবসে এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ৪৫ কর্মদিবসের মধ্যে নামজারি-প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছে। তাছাড়া প্রবাসীদের জন্য মহানগরের ক্ষেত্রে ১২ কর্মদিবস এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ৯ কর্মদিবসে নামজারি কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।

নামজারি আবেদন নামঞ্জুর হলে বা আদেশে কোন ব্যক্তি অসন্তুষ্ট হলে তার প্রতিকার

অনেক কারণেই নামজারি আবেদন নামঞ্জুর হতে পারে। কোনো দলিল-দস্তাবেজে ত্রুটির কারণে হতে পারে, আবার অন্য কোনো যুক্তসংগত কারণেও নামঞ্জুর হতে পারে। কিন্তু আবেদন নামঞ্জুর হলে প্রতিকারের সুযোগ রয়েছে।  আদেশ/রায়ে কোনো ব্যক্তি সন্তুষ্ট না হলে তিনি প্রতিকারের জন্য উক্ত আদেশ/রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন। ১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্র্জাস্বত্ব আইনের ৫ম অংশের ১৪৭ ধারায় রাজস্ব অফিসার কর্তৃক প্রদত্ত প্রতিটি আদেশের বিরুদ্ধে সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তিকে আপিল করার অধিকার প্রদান করা হয়েছে ৷

পিলের সময়সীমা

১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্র্জাস্বত্ব আইন এর ১৪৮ ধারায় বলা আছে- নামজারি মোকদ্দমার কোন আদেশ বা রায়ের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার তারিখ হতে ৩০ দিনের মধ্যে জেলা প্রশাসক (কালেক্টর) এর বরাবরে সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তি আপিল দায়ের করতে পারবেন ৷

যদি কোন ব্যক্তি, কালেক্টর বা জেলা প্রশাসক কর্তৃক প্রদত্ত রায়ে সন্তুষ্ট না হন তাহলে তিনি রায়ের দিন হতে ৬০ দিনের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনার এর নিকট আপিল দায়ের করতে পারবেন ৷ যদি কোন ব্যক্তি বিভাগীয় কমিশনারের রায়েও সন্তুষ্ট না হন তাহলে তিনি বিভাগীয় কমিশনার কর্তৃক প্রদত্ত রায়ের তারিখ হতে ৯০ দিনের মধ্যে ভূমি আপিল বোর্ডে পুনরায় আপিল করতে পারবেন ৷ তবে ভূমি আপিল বোর্ডের রায়ই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে ৷

রিভিশনের সময়সীমা

যদি নামজারি সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো রাজস্ব কর্মকর্তার রায়ের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বা কালেক্টর এর বরাবরে কোনো আপিল করা না হয় কেবলমাত্র সেক্ষেত্রেই জেলা প্রশাসক বা কালেক্টর স্ব-উদ্যোগে কিংবা কোনো সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তির আবেদনের ভিত্তিতে উক্ত প্রদত্ত রায় বা আদেশ প্রদানের তারিখ হতে ১ মাসের মধ্যে ঐ আদেশটি পুনঃনিরীক্ষন বা পরিমার্জন বা সংশোধন করতে পারেন ৷ 

জেলা প্রশাসক বা কালেক্টর কর্তৃক প্রদত্ত আদেশ প্রদানের তারিখ হতে ৩ মাসের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনার তার নিজ উদ্যোগে বা কোন আবেদনের ভিত্তিতে কালেক্টরের আদেশ পরিমার্জন বা সংশোধন করতে পারবেন এমনকি ভূমি আপিল বোর্ড তার নিজ উদ্যোগে বা কোন আবেদনের ভিত্তিতে বিভাগীয় কমিশনার কর্তৃক প্রদত্ত আদেশের তারিখ হতে ৬ মাসের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনার কর্তৃক প্রদত্ত আদেশ পরিবর্তন বা সংশোধন করতে পারবেন ৷ (১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্র্জাস্বত্ব আইন এর ১৪৯ ধারা)

রিভিউ বা পুনঃ বিবেচনা

১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্র্জাস্বত্ব আইন ১৫০ ধারায় রিভিউ বা পুনঃ বিবেচনা বিষয়ে বলা হয়েছে ৷ উক্ত ধারায় বলা হয়েছে যে, কোনো রাজস্ব অফিসার কোনো স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দরখাস্তকারীর দরখাস্তের ভিত্তিতে অথবা নিজ উদ্যোগে তার ও তাঁর পূর্ববর্তী রাজস্ব অফিসার কর্তৃক প্রদত্ত যে কোনো আদেশ রিভিউ বা পুনঃবিবেচনা করতে পারবেন এবং উক্ত আদেশটিকে সংশোধন বা পরিবর্তন বা বহাল রাখতে পারবেন ৷ তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই সময়ের সীমাবদ্ধতাকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে তা হলো পূর্ববর্তী আদেশ প্রদানের তারিখ হতে ৩০ দিনের মধ্যেই রিভিউ পিটিশনের জন্য আবেদন পেশ করতে হবে৷ তবে উল্লেখ্য যে, কোন আদেশের বিরুদ্ধে যদি পূর্বে আপিল বা রিভিশন করা হয়ে থাকে তাহলে রিভিউ বা পুনঃ বিবেচনার জন্য আবেদন করা যাবে না ৷

নামজারি করার প্রসেস ম্যাপ: নামজারি করার ধাপগুলো একনজরে দেখে নিন:

নামজারি নামজারি (Mutation)
আরো বিস্তারিত জানতে বা কোন সহযোগিতার জন্য আমাদের হটলাইনে/ইনবক্স কিংবা হোয়াট্যস্ অ্যাপে যোগাযোগ করুন।